ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরে তীব্র অভিযানের মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা শহরের সমস্ত বাসিন্দাকে মধ্য গাজা উপত্যকায় সরে যেতে বলেছে। বিমান থেকে লিফলেট ফেলে এই নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী দুটি রাস্তাও উল্লেখ করেছে যা দেইর আল-বালাহ এবং আল-জাওয়াইদাতে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে গেছে। মূলত গাজা শহরে এখনও আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন।
এদিকে জাতিসংঘ বলেছে, ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গাজা শহরকে সম্পূর্ণভাবে খালি করতে নির্দেশ দিলো ইসরায়েল।
হামাস বলেছে, গাজা শহরে ইসরায়েলের নতুন এসব কার্যকলাপ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনাকে ব্যর্থ করার হুমকি দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা বুধবার কাতারে পুনরায় শুরু হয়েছে। আলোচনায় মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রধানের পাশাপাশি কাতারের প্রধানমন্ত্রীও অংশ নিয়েছেন।
হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা হোসাম বাদরান এএফপিকে বলেছেন, ‘বোমা হামলা, বাস্তুচ্যুতি এবং গণহত্যা আরও জোরদার করার মাধ্যমে আলোচনায় চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে’ ইসরায়েল।
বিবিসি বলছে, গাজা শহরে এখনও এক-চতুর্থাংশেরও বেশি লোক বসবাস করছে বলে অনুমান করা হয়েছে – এবং কিছু লোককে দক্ষিণে সরে যেতে দেখা গেছে। অন্য অনেকেই যদিও শহর ছাড়তে রাজি নয়।
৪৭ বছর বয়সী বাসিন্দা ইব্রাহিম আল-বারবারি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি গাজা (শহর) ছাড়ব না। অন্যরা যে বোকামি করেছে তা আমি করব না। ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে পার্থক্য করে না। মৃত্যুই যদি আমার ভাগ্য হয় এবং আমার সন্তানদের ভাগ্যেও সেটাই থাকে, তাহলে আমরা আমাদের বাড়িতে সম্মান এবং মর্যাদার সাথে মরব।’
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, তারা কিছু বাসিন্দাদের কাছ থেকে কল পেয়েছে যারা বোমা হামলার তীব্রতার কারণে তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেননি।
সংস্থাটি বলছে, ‘গাজা সিটি থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দারা করুণ অবস্থার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন। (ইসরায়েলি) দখলদার বাহিনী আবাসিক এলাকাগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং লোকজনকে তাদের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাস্তুচ্যুত করছে।’
এদিকে বুধবার জারি করা এক বিবৃতিতে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তাদের সৈন্যরা গাজা শহরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সদর দপ্তরের ভেতরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হামাস এবং পিআইজে যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে’।
আইডিএফ আরও বলেছে, তারা গত দিনে গাজা শহরের পূর্ব শেজাইয়া জেলায় কয়েক ডজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ গুড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া বুধবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে বক্তৃতায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট দাবি করেছেন, ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশ হামাস যোদ্ধা নিহত বা আহত হয়েছেন। বিবিসি অবশ্য স্বাধীনভাবে এই পরিসংখ্যান যাচাই করতে পারেনি।
Leave a Reply