1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

এক যে ছিল ‘ওয়ার্ন’

স্পোর্টস রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪
  • ১৩২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

মাইক গ্যাটিং তার পা সরিয়ে এনেছিলেন লেগ স্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরে। তরুণ অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারের বলটা যে ওদিকেই পড়ছে। টেস্ট ক্রিকেটের টেক্সটবুক ডিফেন্স মেথড। কিন্তু অবিশ্বাস্য সুইং ভাঙল স্ট্যাম্প। সাল ১৯৯৩। প্রায় এক যুগ পর, অফস্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে পড়ল সেই একই বোলারের বল। এবার ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু স্ট্রস। তিনিও গ্যাটিংয়ের মতোই পায়ে ঠেকাতে চেয়েছেন। কিন্তু বলটা ঘুরলো। ভাঙল স্ট্যাম্প। 

ওয়ার্নের জীবনে দুটো ভাগ স্পষ্ট। যেখানে তিনি কিংবদন্তি। ক্রিকেটকে তার মত করে কেউই বোঝেনা। অন্যদিকে তিনি চরম উচ্ছৃঙ্খল। কখন কী করে বসেন বোঝা দায়। দুই জায়গায় একটাই মিল। ওয়ার্ন প্রচণ্ড দুর্বোধ্য। অনেকেরই মতে, ওয়ার্নকে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে দেখতে না পারা দূর্ভাগ্যজঙ্ক। কিন্তু, এমন কিছু না হওয়ার পেছনে দায় তো তারই বেশি।

২০০০ সালের দিকে শেন ওয়ার্ন স্টিভ ওয়াহ’র ডেপুটি হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ডোনা রাইট নামে এক ২২ বছর বয়সী নার্স-কে মাতাল শব্দে ভয়েস মেসেজ পাঠান। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বেশ গুরুতরভাবেই নিয়েছিল বিষয়টি। ওয়ার্ন যদিও বলেছিল, তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় মাঠের কোনো কিছুকে অসুবিধা করছেনা। কিন্ত পরে তাকে সহ-অধিনায়ক থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।

জিতিয়েছেন তো আরও অনেক কিছুই। ১৯৯৯ সালের সেই দুর্দান্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে দেওয়ার কারিগর যে তিনিই। গ্যারি কারস্টেন, হার্শেল গিবসকে করেছেন বোল্ড। ফর্মে থাকা হ্যান্সি ক্রনিয়েকে দাঁড়াতেই দেননি। ফিফটি করা জ্যাক ক্যালিসকেও ফেরান তিনিই। নাটকীয় সেই সেমিতে রাজা হয়েছিলেন এই স্পিনারই।

আর লর্ডসের ফাইনালে? পাকিস্তান তো গ্রুপ পর্বেও এই অস্ট্রেলিয়াকেই হারিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে যে নায়ক হয়েছেন ওয়ার্ন। ইজাজ আহমেদ, মঈন খান, শহিদ আফ্রিদি আর ওয়াসিম আকরাম চারজনকে ফেরালেন সাজঘরে। ৩৩ রানে ৪ উইকেটের সেই স্পেল তো বিশ্বকাপই এনে দিয়েছে অজিদের। সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল, দুইবারেই ম্যাচসেরা ওয়ার্ন।

কিন্তু তিনিই কিনা নেই ২০০৩ বিশ্বকাপে। মাদক নিয়ে এক বছর নির্বাসিত হলেন ওয়ার্ন। ২০০৪-এ জাতীয় দলে ফিরেই দুই ইনিংসে ৫ উইকেট। প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ৬০০ উইকেট নেওয়া। টেস্ট, ওয়ান ডে মিলিয়ে ১ হাজার উইকেট নেওয়ার বিরল নজির। আর সেই ম্যাজিকাল ডেলিভারিগুলোর কথাই বা কে ভুলবে।

ওয়ার্ন পদার্থবিজ্ঞান বুঝতেন কিনা কে জানে। তবে ক্রিকেটের মাঠে ফিজিক্সের ল্যাবই যেন খুলে বসতেন তিনি। বল যেদিকে ঘোরে, তার বিপরীত দিকে প্রবাহের জন্ম দেওয়া, যাকে ফিজিক্স বলে ম্যাগনাস ইফেক্ট। লম্বা ক্যারিয়ারে সেটাই করতেন ওয়ার্ন। প্রায়শই ব্যাটসম্যানরা তাদের পা প্রসারিত করে দিতেন ওয়ার্নের বলের সামনে, তারপরেও এর প্রবাহ ক্ষমতা বা সুইং এত বেশি যে, তা আরো চওড়া হয়ে ঠিকই চলে যেত স্ট্যাম্পে।

তবে এতকিছুর পরেও ওয়ার্নকে ক্রিকেট দুনিয়া মনে রাখবে লেগস্পিন বাঁচিয়ে রাখার জন্য। নব্বইয়ের দশকে ওয়ার্ন আসার আগে সারাবিশ্বেই চলছিল পেস বোলিংএর বিপ্লব। সত্তর এবং আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসারদের দেখে সব তরুণই পেসার হতে চেয়েছে। ড্যামিয়েন ফ্লেমিং, ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে শুরু করে শ্রীনাথ, শোয়েব আখতার কিংবা ড্যারেন গফ, অ্যান্ডি ক্যাডিক, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস। সবখানেই তো পেসার।

সেই আগ্রাসনের দিনে লেগস্পিনের মত সহজ বিষয়ে বিশ্বকে বিমোহিত করেছিলেন ওয়ার্ন। আজকের দিনে লেগস্পিনের এমন জয়জয়কার, সে তো ওই ওয়ার্নের হাত ধরেই। তবে, তার মত করে আর কেউ আসেনি। বিতর্কে হোক বা ক্রিকেটীয় মেধায়, ওয়ার্ন তো একজনই। রূপকথার সেই অতুলনীয় রাজার মতো করেই বলতে হয়, এক যে ছিল ওয়ার্ন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট