মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয় বারের মতো দোর্দণ্ড প্রতাপে হোয়াইট হাউসের মসনদে ফিরলেন রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগের জনমত জরিপের সব হিসেব-নিকাশ উল্টে দিয়ে মঙ্গলবার মার্কিনিরা আরেকবার বেছে নিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে। এর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর কমালা হ্যারিসের উত্থানের আশায় গুঁড়েবালি দেখল বিশ্ব; আর শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশটিতে নতুন ইতিহাস গড়লেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচনী ফল অনুযায়ী, দেশটির নির্বাচনে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ২৭০টির প্রয়োজন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ সময় বুধবার পৌন ৪টার দিকেই এই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান। দেশটির নির্বাচনে ফল নির্ধারণী ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য খ্যাত জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, মেইন, পেনসিলভানিয়ায় লাল শিবিরের জয়ে হোয়াইট হাউসের মসনদ নিশ্চিত হয় ট্রাম্পের।
বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা এডিসন রিসার্চ বলছে, ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টিরও বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে বুধবার হোয়াইট হাউস পুনরুদ্ধার করেছেন; যা দেশটিতে চলমান মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও গভীর করে তুলেছে।
মার্কিন বার্তা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৭৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় কমালা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। তবে এখনও কয়েকটি রাজ্যে আংশিক ভোট গণনা বাকি রয়েছে।
শুধু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটই বেশি পাননি ডোনাল্ড ট্রাম্প, বরং পপুলার ভোটও প্রায় ৫০ লাখ বেশি পুড়েছেন নিজের ঝুলিতে। এর আগে, ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে লাল ঢেউয়ের গর্জনে মেতে ওঠা সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমেরিকা আমাদের এক অভূতপূর্ব ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।’’
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় পরের বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালান ট্রাম্পের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে চালানো ওই সহিংসতার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী দৌড় থেকে দূরে সরিয়ে দেন তিনি।
এরপর মার্কিন অর্থনীতিতে জেঁকে বসা মুদ্রাস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দশায় ভোটারদের উদ্বেগকে পুঁজি করে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। ‘‘আমেরিকা ফার্স্ট’’ নীতির কথা জানিয়ে দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের অবসানের রূপকল্প তুলে ধরে ভোটারদের মন জয় করেন তিনি।
বিপরীতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারের সন্তান কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে তুলবেন বলে ভোটারদের কাছে কমালার বিষোদগার করেন। শেষ পর্যন্ত মার্কিন রাজনীতির বিদ্বেষ আর বিভাজনের রূপরেখায় কমালা হ্যারিসকে হারিয়ে দিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প।
ভোটের পর বুধবার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমর্থকদের নিয়ে ইলেকশন নাইট পার্টিতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল কমালা হ্যারিসের। কিন্তু নির্বাচনের ফলে বিপর্যয়ের আভাস মেলায় সেই অনুষ্ঠান স্থলে যাননি তিনি। সেখানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে খালি চেয়ার আর জনশূন্য মঞ্চ। তবে হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের কো-চেয়ারম্যান সেড্রিক রিচমন্ড মধ্যরাতের পর জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বুধবার দিনের কোনও এক সময় জনসম্মুখে কথা বলবেন কমালা হ্যারিস।
Leave a Reply