• নৌকা না পেলে শুরু হবে বিদ্রোহী হওয়ার তোড়জোড়
• বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র হতে প্রস্তুত অনেকে, চাপ দেবে না কেন্দ্র
• বিএনপিবিহীন মাঠে ভারহীন থাকবেন বিদ্রোহীরাও
• দেশ-বিদেশে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ দেখাতে চান ক্ষমতাসীনরা
• বিদ্রোহীদের সক্রিয় করে ভোটার উপস্থিতির প্রত্যাশা
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, “আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহ করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”
একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তৃণমূলের ক্ষমতা ছিল মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে। তারাই নৌকার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। বঞ্চিত হয়েছেন তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা। একই ব্যক্তি বারবার এমপি কিংবা জনপ্রতিনিধি হওয়ায় ক্ষমতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
কেউ কেউ আবার বলছেন, দীর্ঘদিন যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করার জন্য হলেও জনপ্রতিনিধি হওয়া প্রয়োজন। জনগণের প্রয়োজনে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এই চার দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ১২১ জন ফরম কিনেছেন। ফরম বিক্রি করে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে দলটির।
ঢাকা বিভাগে বিক্রি হয়েছে ৭৩০টি ফরম। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগে ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। কয়েকটি বাদে প্রতিটি আসনে নৌকার মাঝি হতে লড়ছেন ১১ জন।
“আগামী নির্বাচনে তেমন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দলের নেতাদের মধ্যেও একটা প্রতিযোগিতা হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তো আসছে। সে কারণে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। তবে, বিভিন্ন সময়ে দল বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দিয়েছে, তাদের বড় কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। সে কারণ অনেকেই সাহস দেখাবে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, নৌকার টিকিট না পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলে এবার দলও বসে যাওয়ার জন্য চাপ দেবে না। বিএনপি ভোটে আসবে না, এটি ধরে নিয়েই ক্ষমতাসীনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে চাইছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ জিততে না পারেন, এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে শীর্ষপর্যায় থেকে। এর সঙ্গে রয়েছে ভোটারের বেশি উপস্থিতির প্রত্যাশাও
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিগত সময়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, এবার তা হবে না। এবার সেই সুযোগ নেই।”
যদিও বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে এখন পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মুখে একটি শব্দও শোনা যায়নি। একাধিক নেতা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, তারা (বিএনপি) দেশে-বিদেশে নেতিবাচক বার্তা দিতে চায়। সেই বার্তা যেন দিতে না পারে সেজন্য নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
তবে, এবার তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে লড়তে হবে নৌকার প্রার্থীদের। বিএনপিবিহীন নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ হবে কি না— তা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটির পক্ষে কারা ভোটের মাঠে নামবেন, তা জানা যাবে আগামীকাল শনিবার (২৫ নভেম্বর)।
Leave a Reply