★ নাশকতার তথ্য ৯৯৯-এ জানাতে পুলিশের অনুরোধ
★ সারা দেশে মাঠে থাকবে র্যাব
★ বাড়ানো হয়েছে সাইবার পেট্রোলিং
★ নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বারোপ সাবেক আইজিদের
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি নিয়েও গত শনিবার সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের ওই সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং ৪১ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৩ দিনের অবরোধের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, নাশকতা, আগুন, ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্য হত্যাসহ নানা অভিযোগে ৩৬ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫৪৪ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, গত ২১ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিনে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও সহিংসতার ঘটনায় ১৭২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর মধ্যে সমাবেশের দিন ২৮ অক্টোবর ৬৯৬ জনকে এবং ২৯ অক্টোবর ২৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও নাশকতার তথ্য থাকলে ৯৯৯-এ কল করে তথ্য জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
অবরোধে নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় জানতে পেরেছি আগামী তিনদিনের জন্য রেল, সড়ক ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি আসছে। সেটি সারা দেশে হলেও ঢাকা নগরবাসীর সম্পদ ও জান-মালের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আশা করি আমরা যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেব, সেটির সঙ্গে নগরবাসী ও সব শ্রেণির মানুষ আমাদের সহযোগিতা করবে।
নাশকতার শঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, অবরোধকে কেন্দ্র করে কোনো নাশকতামূলক কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে নাশকতা হতে পারে, সমসাময়িক ঘটনা তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মূলত শঙ্কা বিবেচনায় নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনি দায়িত্ব পালন করবে এবং নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রাখবে।
বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিবিদদের বাসায় অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো অপরাধ এবং অপরাধী। এর বাইরে কিছু বলার নেই। পুলিশের কাজ হলো তদন্ত করা। তদন্তে যদি মনে হয় আইনের আওতায় কারো সংশ্লিষ্টতা আছে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই পুলিশের অবস্থান।
সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বারোপ
অতীতে অবরোধের নামে যে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্লেষণ করে শুধু ঢাকা নয় সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, দুর্বল চিত্ত প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবস্থানই হচ্ছে— কোনো অবস্থাতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। ভাঙচুর, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতা-নাশকতা কোনো অবস্থায় হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, অতীতে অবরোধ পরিস্থিতি বিবেচনায় সামনের অবরোধ কর্মসূচিতে দুর্বল চিত্ত প্রদর্শনের সুযোগ নেই। যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। আর অনেকদিন পর এরকম সহিংসতা-নাশকতার পর অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি এসেছে। এসব ব্যাপারে আগাম তথ্য সংগ্রহ করাসহ ইন্টেলিজেন্স উইংগুলোর তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল বলেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় তিন মাস অবরোধ করেছিল তারা। তখন তারা ঘোষণা করেছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ। ঘোষণা দিয়ে ডাকা অনির্দিষ্টকালের সেই অবরোধ কিন্তু পরে তারা আর প্রত্যাহার করেনি। তার মানে হচ্ছে আমরা কিন্তু অবরোধের মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, সেই অবরোধে তারা পেট্রল বোমায় মানুষ মেরেছে, পুলিশ হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করেছে। এবার তারা কী করে দেখার বিষয়। অতীতের অবরোধের ইতিহাস তাদের ভালো নয়। সেজন্য অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অত্যন্ত কঠোর ও সতর্ক থাকতে হবে। ছোটখাটো সব ধরনের পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই আর অতীত অবরোধের মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতীতের টানা অবরোধের সময় নাশকতা ও সহিংসতা যেসব জেলায় সবচেয়ে বেশি হয়েছিল, সেখানে নিরাপত্তা অধিক জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও সব জেলায় কঠোর অবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিতে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার চেষ্টার ঠেকাতে এবং সরকারি সম্পদ ও কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি উপাসনালয়ে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অবরোধে নাশকতা-সহিংসতা ঠেকাতে সারা দেশে মাঠে থাকবে র্যাব
বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে তিনদিনের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো ধরনের নাশকতা ও জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সারা দেশেই র্যাবের সব ব্যাটালিয়ন প্রস্তুত রয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ৩১ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তিনদিনের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ফোর্সেসের ১৫ ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল দল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলবে। কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এছাড়া নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র্যাব সার্বক্ষণিক দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা নাশকতা ও সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এই ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র্যাব।
উসকানি-গুজব ঠেকাতে বাড়ানো হয়েছে সাইবার পেট্রোলিং
সম্প্রতি বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনলাইনে স্বার্থান্বেষী ও সুযোগ সন্ধানী মহল বিভিন্ন উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়াচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার বলেন, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম এ সব দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সার্বক্ষণিক সাইবার জগতে নজরদারি রাখছে।
Leave a Reply