স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কারাবন্দী নেতাদের বিষয়ে হেফাজত একটি তালিকা দিয়েছে। তালিকার অনেকে মুক্ত হয়েছেন। বাকিদের মুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সিলেবাস আপনারা তৈরি করবেন। আপনাদের সিলেবাসে সরকার হাত দেবে না। বেফাকের সিদ্ধান্তে কোনো হস্তক্ষেপ করি না। শুধু এতটুকু বলি, আপনারা কী পড়াচ্ছেন আমাদেরকে একটু জানাবেন। যাতে আমরা সবাইকে বলতে পারি।
কওমি মাদ্রাসায় অনেক জ্ঞানী-গুণী আলেম আছেন। এসব মাদ্রাসা ইসলামের শিক্ষা দেয়। সুতরাং এখানে কোনো জঙ্গির উত্থান হতে পারে না। জঙ্গিবাদ দমনে আপনারা ও মসজিদের ইমামরা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন, বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, রক্তপাতের নয়। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষকে এই মেসেজ দিতে সক্ষম হয়েছি। এখানে আলেম-ওলামারা আছেন তারা আমাদেরকে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। আমরা সেটাই চাই। হাটাজারী মাদ্রাসার সারা বাংলাদেশের ভূমিকা রাখছে। এখানে হাজার হাজার ছাত্র পড়ালেখা করছে। এখান থেকে পাস করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন। আমরা চাই আপনারা বাংলাদেশকে আলোকিত করবেন। ইসলামী শিক্ষা বিতরণের জন্য আমরা যা যা দরকার সব করব। আমরা ইসলামী আরব বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। উদ্দেশ্য একটাই আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধি।
তিনি বলেন, নুরানি মাদ্রাসা বন্ধের প্রশ্নই আসে না। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসে প্লেন থেকে নেমে প্রথমে বলেছেন বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তিনি জীবদ্দশায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বহু ইসলামিক প্রতিষ্ঠান করেছেন। টঙ্গী ইজতেমার বিশাল মাঠ তিনি করেছেন। মদ-জুয়া বন্ধ করেছেন। তিনি ইসলামকে হৃদয়ে ধারণ এবং চর্চা করেছেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। ফজরের নামাজ পড়ে কাজ শুরু করেন। তিনি কেন নুরানি মাদ্রাসা বন্ধ করবেন? বরং তিনি এই মাদ্রাসা কীভাবে প্রসার করা যায় সেটি নিয়ে চিন্তা করেন। তিনি কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করেন নাই। যখনই কোনো কটূক্তি কিংবা কোনো বিষয় আসে তিনি শক্ত হাতে দমন করেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, করোনার সময়ে সবকিছু বন্ধ ছিল। ওই সময় বন্ধ থাকা হেফজখানা তিনি চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাতে কুরআন চর্চা চালু থাকে। তিনি দাওরাহ হাদিসকে মাস্টার্স সমমর্যাদা দিয়েছেন। তিনি প্রত্যেক উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স করে দিয়েছেন। সেখানে শুধু নামাজ হয় না। ইসলাম নিয়ে গবেষণাও হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা ইয়াহিয়া, সহকারী পরিচালক মুফতি জসিম উদ্দিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নদভী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই বিক্ষোভে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে চারজন নিহত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে দুদিন পর ২৮ এপ্রিল সারাদেশে হরতাল ডাকা হয়। এসব আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অগ্নিকাণ্ডসহ নাশকতা চালানো হয়। একপর্যায়ে তাদের ওপর চড়াও হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একের পর এক গ্রেপ্তার করা হয় শীর্ষ নেতাদের। এসব ঘটনার পর দীর্ঘদিন চুপসে থাকা হেফাজত সম্প্রতি সক্রিয় হয়। তারা সমঝোতার জন্য সরকারের শীর্ষ মহলে যোগাযোগ করতে থাকে। সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দলটির নেতারা একই দাবি জানান।
সবশেষ গত মঙ্গলবার ১১ এপ্রিল নেতাকর্মীদের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দেয় হেফাজত। এরপর বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাটহাজারী মাদ্রাসায় সফরে আসেন।
Leave a Reply