রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের (৫৮) মরদেহ দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জানাযা শেষে ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দী গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী জেলখানায় অন্য আসামির সঙ্গে মহিউদ্দিনকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মহিউদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তাহেরও ওই বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। হত্যা মামলায় সাজা হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয় মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে।
জানা যায় তার স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জানাযায় বক্তব্য দেন, ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা ও গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন।
মহিউদ্দিনের বৃদ্ধা মা সেতারা বেগমকে (৮২) প্রথমে সন্তানের মৃত্যুদণ্ডের খবর জানানো হয়নি। বাড়িতে মৃতদেহ আনার পর সেতারা বেগমকে মৃত্যুর খবর জানানো হয়, দেখানো হয় ছেলের মৃতদেহ। এরপর তিনি ভাবলেশহীন ও নির্বাক হয়ে যান।
মহিউদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মহিউদ্দিন সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন। তারা ন্যায় বিচার পাননি।
সাংবাদিকরা লিখতে লিখতেই তাকে ফাঁসির দড়ি পর্যন্ত নিয়েছে। এ মামলার এক নম্বর আসামি খালাস পেয়েছে। অথচ চার নম্বর আসামি মহিউদ্দিনের ফাঁসি হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল ৬ টার দিকে মহিউদ্দিনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। মরদেহ আনতে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজশাহী যান ছোট ভাই আরজু মিয়া।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে লাশের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে আসেনি মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানেরা। মহিউদ্দিন এক মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। তারা রাজশাহীতে থাকেন। তারা মরদেহ গ্রহণ করতেও কারাগারে যাননি।
এমনকি গত ২৫ জুলাই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের দিনেও মহিউদ্দিনের ভাই, বোন গ্রাম থেকে গেলেও রাজশাহী থেকে স্ত্রী ও সন্তানেরা যাননি।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের ভাই আরজু মিয়া জানান, মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানেরা এতই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত যে, তাদের আসার মতো অবস্থা নেই। মেয়েটা বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।
এলাকাবাসী জানায়, মহিউদ্দিন ভাঙ্গা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর ১৯৮১ সালে ভাঙ্গা কে এম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনি বিদ্যায় ভর্তি হন।
এরপর হাতে গোনা কয়েকবার বাড়িতে এসেছেন। ২০০৬ সালে অধ্যাপক তাহের হত্যার মামলায় গ্রেপ্তারের পর মাঝে জামিনে বাইরে আসলেও তিনি বাড়িতে আসেন নি।
Leave a Reply