1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

ভিসা পেয়েও মালয়েশিয়া যাওয়া হলো না
হাজারো যুবকের স্বপ্নভঙ্গের দায় কার, আদৌ যেতে পারবেন তারা?

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪
  • ১৮২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশিদের জন্য তিন দফায় বন্ধ হয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। প্রতিবারই অনিয়মের অভিযোগে এই শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। আবার যখন খুলেছে তখনও অনেক ‘অনিয়ম’ সঙ্গী হয়েছে। অভিযোগের পর অভিযোগ উঠেছে এজেন্সি ও সরকারি ব্যবস্থাপনা নিয়ে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলায় বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হন বিদেশগামী কর্মীরা। স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের অনেকের।

গত ২৭ মে থেকে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের ভোগান্তি শুরু হয়। ওই সময় ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দুটি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় কর্মীদের। প্রায় দুই দিন বিমানবন্দরে ভোগান্তির পর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ হয় কিছু কর্মীর। এর মধ্যে ২৯ ও ৩০ মে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু আরও হাজার হাজার কর্মী বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকেন। শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ মে বিমানবন্দরে জড়ো হন অসংখ্য মালয়েশিয়াগামী কর্মী। কিন্তু ফ্লাইট ও টিকিট সংকটসহ নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত বিমানে উঠতে পারেননি বহু কর্মী।

অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথেষ্ট সময় দেওয়ার পরও হতাশা নিয়ে বিমানবন্দর থেকে কয়েক হাজার কর্মীর ফিরে যাওয়া দুঃখজনক। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে এর দায় নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব মালয়েশিয়া সরকারের কাছে দেন-দরবার করে এসব কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে

মালয়েশিয়া যেতে দালালকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ময়মনসিংহের রাকিবুল হাসান। তিনি জানান, দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেতে একটি এজেন্সিকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। বিমানের টিকিটের দাম বেড়েছে বলে আরও ৫০ হাজার টাকা চাইল, সেটাও দিলাম। তবুও যেতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত যদি যেতে না পারি তাহলে তো আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। জমি-জমা ও গরু বিক্রি করে টাকা দিয়েছি।

৩১ মে’র পর যে বাংলাদেশিদের আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না, সেই ঘোষণা দুই মাস আগেই দিয়েছিল দেশটি। ঢাকায় মালয়েশিয়ার দূতাবাস এবং কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনও বিষয়টি আগেই সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিল। তবুও হাজার হাজার বাংলাদেশি লাখ লাখ টাকা খরচ করেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, শ্রমিকদের স্বপ্নভঙ্গের এ দায় কার?

dhakapost
বিমানবন্দরে জড়ো হন অসংখ্য মালয়েশিয়াগামী কর্মী/ সংগৃহীত ছবি

 

অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথেষ্ট সময় দেওয়ার পরও হতাশা নিয়ে বিমানবন্দর থেকে কয়েক হাজার কর্মীর ফিরে যাওয়া দুঃখজনক। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে এর দায় নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব মালয়েশিয়া সরকারের কাছে দেন-দরবার করে এসব কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট। কর্মীদের না যেতে পারার দায় এই এজেন্সিগুলোর ওপরই বেশি বর্তায়।

তবে পুরো দায় নিজেদের কাঁধে নিতে নারাজ তারা। এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর জন্য এককভাবে এজেন্সিগুলোকে দায়ী করা যাবে না। সমন্বয়ের অভাবে এমনটা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ওই সিন্ডিকেটের অংশ সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। এর স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। সময় পেয়েও কর্মীদের পাঠাতে না পারার ব্যর্থতার প্রশ্নে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সাধারণত হঠাৎ করে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এবার তারা দুই মাস আগে জানিয়েছে। এখানে সমন্বয়ের অভাব ছিল। ২৭-২৮ মে কিছু এজেন্সির ই-ভিসা ইস্যু হয়েছে। ৩১ তারিখ লোক পাঠানোর শেষ দিন, তাহলে কীভাবে দুই-তিন দিন আগে ই-ভিসা ইস্যু করল তারা? বন্ধ হওয়ার আগের দিন ৩০ তারিখেও এটা হয়েছে। এটা সুস্পষ্ট অবহেলা।

বায়রার সাবেক এ মহাসচিব বলেন, এখানে যে সমন্বয়হীনতা ছিল তা পরিষ্কার। শেষ সময়ে ফ্লাইট ও টিকিট স্বল্পতা ছিল, টিকিটের দামও চড়া ছিল। আরও নজরদারির দরকার ছিল সরকার বায়রার। বিমান আরও বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারত। পুরোটা টিম ওয়ার্ক। এখানে এককভাবে কাউকে দোষী করা যাবে না।

বায়রার বর্তমান মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, শেষ সময়ে কেন অব্যবস্থাপনা হয়েছে এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সরকার বা এজেন্সিকে দোষারোপ করতে চাই না। আমরা বসব। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। যথেষ্ট সময় দিয়েছে মালয়েশিয়া। এরপরও আমরা লোকগুলোকে পাঠাতে পারিনি। এটা চরম ব্যর্থতা।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোয় সংকট তৈরির সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

dhakapost

৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বিপুল সংখ্যক কর্মী যেতে না পারার কারণ খুঁজে বের করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রোববার ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান অনুবিভাগ) নূর মো. মাহাবুবুল হককে।

রোববার (২ জুন) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের নির্ধারিত সময়সীমা ৩১ মে’র মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এমন কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রেরণে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান, গমনেচ্ছু কর্মীদের হয়রানিসহ ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলো।

এ কমিটির কাজ হবে– কর্মের অনুমতি ও বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরও মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করতে না পারার কারণ চিহ্নিতকরণ, নির্ধারিত সময়ে কর্মী প্রেরণে ব্যর্থ রিক্রুটিং এজেন্সি চিহ্নিতকরণ, কমিটির কাছে মালয়েশিয়া যেতে পারেনি এ ধরনের কোনো কর্মী অভিযোগ করলে তা আমলে নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেন কর্মীরা যেতে পারেনি সে বিষয়ে জানতে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি তাদের সুপারিশ দেবে। যারা এটার জন্য দায়ী হবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।

বারবার বন্ধ করে বারবার খোলা

২০০৯ সালে প্রথম দফায় বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর ২০১৬ সালের শেষ দিকে পুনরায় বাজারটি খোলা হয়। তখন বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এতে যুক্ত ছিল। পরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

এর ৪ বছর পর ২০২২ সালে আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। শ্রমবাজার খোলার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে মালয়েশিয়া। তখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সব এজেন্সির জন্য কর্মী পাঠানোর সুযোগ উন্মুক্ত রাখার ওপর জোর দেয়নি, বরং তারা এজেন্সি নির্ধারণের দায়িত্ব দেয় মালয়েশিয়াকে। দেশটি ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয়।

সবশেষ গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, তারা আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।

জানা গেছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মে’র পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও মন্ত্রণালয় আরও ১ হাজার ১১২ জনকে অনুমোদন দিয়েছে। ৩০ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় যেতে অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন।

dhakapost
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট সংকট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী

 

যেতে না পারা কর্মীদের হিসাবে গরমিল

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমান টিকিটসহ নানা জটিলতায় কত শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তার সঠিক হিসাব এখনো অজানা। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পেয়েও দেশটিতে ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী যেতে না পারার তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।

কিন্তু এর বাইরে আরও অনেক কর্মী রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

বিএমইটির একটি সূত্র জানায়, ভিসা ও অনুমোদন জটিলতায় ৩১ হাজার ৩০৪ জন কর্মী আটকা পড়েছেন। অন্যদিকে, কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের ধারণা ২৫ হাজারের কিছু বেশি সংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। আর বায়রার ঊর্ধ্বতনরা সঠিক হিসাব দিতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের ভাষ্য, সাড়ে ৫ হাজারের বেশি কর্মী দেশে আটকা পড়েছেন।

জানা গেছে, এবার শ্রমবাজার চালুর পর ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া। এর মধ্যে সব কর্মীর জন্য মালয়েশিয়া থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। বিএমইটি থেকে শেষ পর্যন্ত ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ কর্মীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কতজন যেতে পারেননি বা কী পরিমাণ ই-ভিসা আছে সেটা চেক করা দরকার। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি।

এ প্রসঙ্গে বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ঠিক কত লোক যেতে পারেননি, সেটা ফিগার আউট করা যায়নি। কেউ বলে ৪০ হাজার, কেউ বলে ৩০ হাজার। এখন আমাদের সঠিক ডেটা দরকার, আসলে কত লোক যেতে পারেনি। আর এটা করাও খুব সহজ। মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি যদি এজেন্সির কাছে তথ্য চায় তারা মেইল করলে তথ্যটা বের হয়ে আসবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলেও আমাদের ডেটা লাগবে। পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক সংখ্যা না পাওয়া গেলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে লোকগুলো পাঠানোর জন্য কথা বলা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, ৩১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে মন্ত্রণালয় (প্রবাসী কল্যাণ) অনুমোদন দিয়েছে। বিএমইটির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে। ৩১ মে পর্যন্ত যেতে পেরেছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জন যেতে পারেননি। সংখ্যাটা কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমান টিকিটসহ নানা জটিলতায় কত শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তার সঠিক হিসাব এখনো অজানা। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পেয়েও দেশটিতে ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী যেতে না পারার তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী

 

আটকা পড়া কর্মীরা যেতে পারবেন তো?

কুমিল্লার শাসনগাছায় ছোট একটি দোকান ছিল মমিনুল হকের। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সব বন্দোবস্ত হয়ে যাওয়ায় দোকান ছেড়ে দেন তিনি। চার সদস্যদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মমিনুল মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গে দিশেহারা। শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।

মমিনুল বলেন, নিজের কাছে কিছু জমানো টাকা ছিল। সব খরচ হয়ে গেছে মালয়েশিয়া যাওয়ার পেছনে। না যেতে পারলে তো বিপদে পড়ে যাব। কী করব, পরিবারকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব? সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আশা করি যারা আটকা পড়েছেন তারা যেতে পারবেন। হয়ত টাইমফ্রেম বলা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আমাদের হাইকমিশনও চেষ্টা করছে।

dhakapost
শুক্রবার রাতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর পরিদর্শন করে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান

 

এদিকে, গত শুক্রবার রাতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর পরিদর্শন করে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান জানান, নির্ধারিত সময়ে দেশটিতে যেতে না পারা কর্মীদের নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন।

হাইকমিশনার বলেন, যারা ভিসা পেয়ে মালয়েশিয়ায় আসতে পারেননি, তাদের নিয়ে আসার ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

কর্মীরা যেতে না পারলে এজেন্সিগুলোর সঙ্গে বড় ধরনের গন্ডগোল হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। তিনি বলেন, যে সমস্যা হয়েছে এর সমাধান কঠিন। লোক পাঠানোর জন্য এজেন্সিগুলোর প্রায় ৯০ ভাগ টাকা খরচ হয়ে গেছে। যারা যেতে পারেননি, তারা তো এখন টাকা ফেরত চাইবেন। আমরা কী জবাব দেব? এজেন্সি আর কর্মীদের মধ্যে বিশাল গন্ডগোল লেগে যাওয়ার পরিস্থিতি হবে।

বায়রার সাবেক এ মহাসচিব বলেন, এখন কথা হলো করণীয় কী? কতজন যেতে পারেনি সেটার সঠিক ডেটা দরকার। নিজের গাফিলতির কারণে যারা যেতে পারেনি তাদের ডেটাও দরকার। এসব জানার পর মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথা বলা দরকার। আর এ ব্যাপারে মালয়েশিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান রোববার সাংবাদিকদের বলেন, এখনো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ৩১ মে’র পর আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়ানোর জন্য আমরা মালয়েশিয়া সরকারকে চিঠি দিয়েছি।

প্রয়োজনে মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের টাকা রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকার কাজ করবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

আগামী ৫ জুন ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মোহাম্মদ হাশিমের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিন্ডিকেট ভাঙা কি অসম্ভব?

দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় কারণে প্রতিবার বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়। আর পুরো দায় বর্তায় সিন্ডিকেটের ওপর। এরপরও শ্রমবাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকে ওই চক্রের হাতেই। এ সিন্ডিকেট বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় প্রান্তে বেশ সক্রিয়।

সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মোহাম্মদ হাশিম বলেন, এখানে সিন্ডিকেট থাকতে পারে, যা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

হাইকমিশনারের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বায়রার বর্তমান মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরীর কাছে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায়, সেখানে আমি যুক্ত নই। চুক্তি স্বাক্ষরের ভিত্তিতে লোক গেছে। চুক্তিতে কিছু ক্লজ আছে। হাইকমিশনার বলছেন, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তার সরকার কেন সব এজেন্সির জন্য কর্মী পাঠানো উন্মুক্ত করতে পারছে না? তারা সব এজেন্সিকে কাজের সুযোগ কেন দিচ্ছে না?

আর বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে, ফেইল করেছে। এখন ২০২২-২৩-এ এসেও একই ঘটনা। আমরা কেন এটা থেকে বের হতে পারছি না? কেন বাংলাদেশের জন্য লিমিটেড এজেন্সি হবে? স্বচ্ছতা থাকা দরকার। সব এজেন্সিকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ১৪টা দেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার যে নিয়ম বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হোক। পুরো সিস্টেমটা স্বচ্ছতার মধ্যে আসতে হবে। নেপালে ৮০০-৯০০ এজেন্সি কাজ করে, অথচ আমরা পারছি না।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সিন্ডিকেটে বিশ্বাস করি না। যে দেশ শ্রমিক নেবে তারা যদি সিন্ডিকেটে বিশ্বাস করে বা নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে পছন্দ করে আমরা কী করব। আমরা চাই দেশের আড়াই হাজার এজেন্সির সবার মাধ্যমে বিদেশে কর্মী যাক।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট