1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

মহানগর ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ২৯৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

 

প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা জাতির অবদান। আমাদের দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এজন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা যায়। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার মেয়েদের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায় প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। মানুষ যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকে, সুন্দর করে তৈরি করে, সুন্দর সুর করে গেয়ে থাকে তখন তাকে শিল্প বলা হয়। শিল্পের এ কাজকে বলা হয় শিল্পকলা। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মাটির শিল্প। মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এই কাজ হয় না। দো-আঁশ মাটি তেমন আঠালো নয়, আর বেলে মাটি ঝরঝরে তাই এগুলো দিয়ে মাটির শিল্প হয় না। মৃৎশিল্পের জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এঁটেল মাটি বেশ আঠালো। আবার এঁটেল মাটি হলেই যে তা দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে তাও নয়। এজন্য দরকার যত্ন আর শ্রম। দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। এসব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের মধ্যে অন্যতম হলো একটা কাঠের চাকা। এই চাকায় নরম মাটির তাল লাগিয়ে বিভিন্ন আকারের মাটির পাত্র ও বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে কুমোররা। মৃৎশিল্পের মূল কারিগর আমাদের দেশের কুমোর সম্প্রদায়। যুগ যুগ ধরে কুমোররা বংশপরম্পরায় তৈরি করে আসছে বিভিন্নরকম মৃৎশিল্প। এসব মৃৎশিল্পের মধ্যে রয়েছে মাটির কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সরাই, মটকা, জালা, পিঠে তৈরির বিভিন্ন ছাঁচ ইত্যাদি। এছাড়া কুমোররা তৈরি করে আসছে উৎসব-পার্বণের জন্য বিভিন্ন রঙের বাহারি মাটির জিনিস, তৈজসপত্র। হাঁড়ি কলসি ছাড়াও আমাদের বাংলাদেশে এক সময় গড়ে উঠেছিল সুন্দর পোড়ামাটির ফলকের কাজ। এর অন্য নাম টেরাকোটা। এই টেরাকোটা বাংলার অনেক পুরনো শিল্প। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, বৌদ্ধস্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে এই টেরাকোটার কাজ রয়েছে। তা ছাড়া বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ। পোড়ামাটির এই ফলক বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প। সম্প্রতি নরসিংদীর ওয়ারীবটেশ্বরে পাওয়া গেছে প্রায় হাজার বছর আগের সভ্যতার নিদর্শন। মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক। আজকাল যদিও প্রাচীন আমলের মতো টেরাকোটা হচ্ছে না, তবে পোড়ামাটির নকশার কদর বেড়েছে। বড় বড় সরকারি-বেসরকারি ভবনে আজকাল সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্নরকম নকশা করা মাটির ফলক ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের কুমোররাই এসব তৈরি করছে। মৃৎশিল্পের কাজ এ দেশে শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে। এই শিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব। এই দেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন, মৃৎশিল্প তারই পরিচয় বহন করে। এই শিল্পের চর্চা ও সম্প্রসারণে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার। মৃৎশিল্প আমাদের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। ২০০০ সালের পর বেড়ে যায় রপ্তানি। এখন ইউরোপ ও আমেরিকা ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের পণ্য। রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে ভারত, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। বিদেশে মূলত মাটির তৈরি পামিজ, ফুলের টব, বিভিন্ন ধরনের গার্ডেন প্রডাক্ট, নাইট লাইট, ডাইনিং আইটেম, ইনডোর গার্ডেন আইটেম, ফুলদানি, মাটির টব ও মাটির ব্যাংকের চাহিদা আছে। ব্যাপক ভিত্তিতে মাটির তৈরি জিনিস রপ্তানি করা গেলে আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর অন্যতম হচ্ছে মৃৎশিল্প। এটি শুধু শিল্প নয়, আবহমান গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। মাটির নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশার কারণে এই শিল্পের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে যাতে বাইরের রাষ্ট্রে রপ্তানি করা যায় তার জন্য আরও বেশি করে উদ্যোগ নিতে হবে। মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার এবং পালদের সহজশর্তে ঋণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্নমুখী উৎপাদন বাড়াতে হবে। এই দেশীয় শিল্পের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট