জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে সংসদে বিল তোলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন’ বিল সংসদে উত্থাপন করেন। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রদ করে নতুন আইন করতে বিলটি তোলা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে জন্মের পরপরই নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় এনআইডি দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন আইন হলে ইসি সে ক্ষমতা হারাবে। এটি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে একটি নিবন্ধকের আওতায় যাবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনটি রহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছে রক্ষিত এবং নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সংগৃহীত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত নিবন্ধকের কাছে হস্তান্তরিত হবে।
বিলটি পাস হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হবে এবং ভোটার তালিকা প্রণয়নে জটিলতা হবে এমন অভিযোগ করে এর বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ভোটার লিস্টের ক্ষেত্রে এই জাতীয় পরিচয়পত্র আইন কোনও অন্তরায় ঘটাবে না। সেখানে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আমরা ওভাবেই প্রসেস করবো। যখন নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়ে যাবে তখনই ভোটার হয়ে গেছেন বলে নোটিশ পেয়ে যাবেন। তার নাম ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এর সব চিন্তাভাবনা করে সময়োপযোগী করে বিদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এটা করেছি। জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ডটি সবখানে প্রয়োজন হয়। সেজন্যই আমরা এ কাজটি করতে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতেই ব্যক্তিগত পরিচয়ের জন্য একটি কার্ড থাকে। এটি সারা পৃথিবীতে প্রচলিত। আমরা সেই জাতীয় পরিচয়পত্রটি করতে চাচ্ছি।
বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা ভোটের সময় একটি ভোটার লিস্ট করেছিলাম। আমাদের প্রয়োজনেই ওই ভোটার লিস্ট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি কার্ড দিয়েছিলাম। ১৮ বছরের পর থেকে তা কার্যকর হচ্ছিল। কিন্তু এখানে আমরা এই জায়গাটিতে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে, জন্মের দিন থেকেই একটি পরিচয়পত্রের নম্বর তার হয়ে যাবে। যেদিন যে মৃত্যুবরণ করবে, তার নম্বরটির সমাপ্তি ঘটবে। আমাদের উদ্দেশ্য সেটাই।
বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য একজন নিবন্ধক থাকবেন। তাকে সরকার নিয়োগ করবে। জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে পরিচয় নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধকের কাছে আবেদন করতে হবে। একজন নাগরিককে নিবন্ধক একটি নম্বর দেবেন। সেটা একক পরিচিতি নম্বর (ইউনিক আইডেনটিফিকেশন নম্বর) হিসেবে সবখানে ব্যবহার হবে।
বিলে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দেবে। এজন্য নিবন্ধকের কার্যালয়ের অধীন একটি সেল থাকবে। এই সেলে নির্বাচন কমিশনের এক বা একাধিক কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবে। এর ফলে নিবন্ধকের দপ্তর থেকে সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে ইসি ভোটার তালিকা তৈরি করবে।
বিলে বলা হয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। নিবন্ধক হবেন এই কমিটির সদস্য সচিব। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন সদস্য।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হবে। বিভিন্ন দেশের উদাহরণের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত। তাই সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে এই সেবাটি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বর্তমান আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।
Leave a Reply