1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৬ অপরাহ্ন

এবার যেমন-তেমন, আগামীতে আরও ভোগাবে গরম

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২৩৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

>> এপ্রিলে শেষ নয়, আগস্টেও ভোগাবে তীব্র গরম
>> আগামী বছর এক মাস দীর্ঘ হতে পারে এ তাপদাহ

গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ তাপপ্রবাহ চলবে আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও তাপমাত্রা গড়েছে নতুন রেকর্ড। কাঠফাটা রোদ আর অসহ্য গরম আগামী আগস্টেও ভোগাতে পারে বলে দাবি করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এপ্রিল-মে মাসে সাধারণত এ ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে, এ বছর চলমান তাপপ্রবাহ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আগামী আগস্টেও একই ধরনের তাপপ্রবাহ দেশজুড়ে বয়ে যেতে পারে। চলতি বছর দুবার দাবদাহের মুখোমুখি হতে হবে দেশের মানুষকে। তবে, আগামী বছরগুলোতে এ ধরনের তাপপ্রবাহ মাসব্যাপী চলার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, চলমান তাপপ্রবাহে সবাই উদ্বিগ্ন। গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটছে। যা আগে কখনও দেখা যায়নি। হঠাৎ অস্বাভাবিক তাপদাহের মূল কারণ হলো বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন।

ঢাকায় ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হলেও বাস্তবে এটি অনুভব হচ্ছে আরও ৬-৭ ডিগ্রি বেশি। এ কারণে স্যাঁতসেঁতে শরীরে অস্বস্তিকর গরম অনুভূতি হচ্ছে। তাপপ্রবাহের দুটি রূপ আছে। একটি হচ্ছে- শুষ্ক অবস্থা, আরেকটি হলো- আদ্র পরিস্থিতি। বর্তমানে আর্দ্রতা কম হচ্ছেবুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলি তাহলে স্পষ্ট করে বলতে হবে যে অস্বাভাবিক নগরায়ন, জলাভূমি ও গাছপালা কমে যাওয়া এবং বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্য কারণ। বায়ুদূষণ কমানো এবং নগরে সবুজ বেষ্টনী বাড়াতে না পারলে আগামীতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

dhakapost

চলতি তাপপ্রবাহের জন্য বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দায়ী করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এ তাপপ্রবাহ শুধু বাংলাদেশ নয়, পাশের দেশ ভারতের কলকাতা, নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন শহরে চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ এমন আবহাওয়া তৈরি হয়েছে।’

যে কারণে মরুভূমির মতো আবহাওয়া

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাপপ্রবাহকে ‘মৃদু’, ৩৮ থেকে ৪০ হলে ‘মাঝারি’ এবং ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে তাকে ‘তীব্র’ তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের ‍ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এমনকি সূর্যাস্তের পর গভীর রাত পর্যন্ত বাতাস উত্তপ্ত থাকে। প্রকৃতির রুদ্র রূপে দুঃসহ জীবন-যাপন করছে মানুষ। সবমিলিয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণ!

কেউ কেউ চলমান তাপপ্রবাহকে মরুভূমির আবহাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। মরুভূমির দেশগুলোতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। সেখানে গত শনিবার থেকে দেশের আট জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে।

ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি কমে গেছে। নানা অবকাঠামোর কারণে পদ্মার শাখা নদ-নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে গেছে। সেখানে গাছপালাও কম। আর ঢাকাসহ বড় শহরগুলো অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে বৃক্ষ ও জলাভূমিশূন্য হয়ে পড়েছে। যে কারণে এপ্রিলে সূর্য থেকে আসা উত্তাপে ভূখণ্ড দ্রুত গরম হয়ে যাচ্ছে

এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ এলাকা। গ্রীষ্মকালে গরম থাকলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হতো না। কিন্তু এক দশক ধরে দেশের বড় একটি অংশের আবহাওয়া মরুভূমির মতো আচরণ করছে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এখন যে তাপপ্রবাহ চলছে তা আগে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত দিন চলত। এবার ২০ দিনের বেশি চলবে। এটা আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ।’

‘এছাড়া আবহাওয়ার আচরণের নতুন একটি দিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি থাকা। আবহাওয়ার এমন আচরণ অনেকটা মরুভূমির দেশগুলোর মতো।’

dhakapost

তার মতে, ‘দেশের একেক এলাকায় একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার তাপপ্রবাহ লক্ষ করা যেত। তবে, গত দুই যুগ ধরে দেশের বড় বড় শহর, বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি তাপপ্রবাহ হচ্ছে। মূলত, এসব এলাকার নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং গাছপালা কমে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখন স্পষ্ট হচ্ছে।’

বাংলাদেশে আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক আচরণের অন্যতম কারণ ‘ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব’ বলে মনে করেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল। সম্প্রতি এক নিবন্ধনে তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি কমে গেছে। নানা অবকাঠামোর কারণে পদ্মার শাখা নদ-নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে গেছে। সেখানে গাছপালাও কম। আর ঢাকাসহ বড় শহরগুলো অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে বৃক্ষ ও জলাভূমিশূন্য হয়ে পড়েছে। যে কারণে এপ্রিলে সূর্য থেকে আসা উত্তাপে ভূখণ্ড দ্রুত গরম হয়ে যাচ্ছে। আর সূর্য ডুবে গেলে তা দ্রুত তাপ ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’

৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি বলা হলেও অনুভব হচ্ছে আরও বেশি

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি বলা হলেও অনুভব হচ্ছে আরও বেশি। অঞ্চল ভেদে বাস্তবের তাপমাত্রার চেয়ে ৬-৭ ডিগ্রি বেশি অনুভব করছে মানুষ। দীর্ঘদিনের বৃষ্টিশূন্যতা, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য সরাসরি কিরণ দিচ্ছে। ফলে দেশের বাইরে থেকে ধেয়ে আসছে লু হাওয়া। এসব কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ইতোমধ্যে হাওরসহ কিছু এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সে সব জায়গায় চলতি তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে, উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় ধান পরে লাগানো হয়েছে। সেখানে এ সময়ে খুব সাবধানে ধানের পরিচর্যা করতে হবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান

এ বিষয়ে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হলেও বাস্তবে এটি অনুভব হচ্ছে আরও ৬-৭ ডিগ্রি বেশি। এ কারণে স্যাঁতসেঁতে শরীরে অস্বস্তিকর গরম অনুভূতি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের দুটি রূপ আছে। একটি হচ্ছে- শুষ্ক অবস্থা, আরেকটি হলো- আদ্র পরিস্থিতি। বর্তমানে আর্দ্রতা কম হচ্ছে। এ কারণে ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়াসহ শরীরের চামড়া পুড়ছে বলে মনে হচ্ছে।

বিপাকে কৃষক-শ্রমজীবী মানুষ

চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। বেশি গরমের মধ্যে পেটের দায়ে তাদের প্রতিদিন কাজে নামতে হচ্ছে।

রাজধানীতে দিনমজুরের কাজ করেন ময়মনসিংহ থেকে আসা আজম মিয়া। তিনি বলেন, বিল্ডিংয়ের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করি। প্রচুর গরমের কারণে এক সপ্তাহ ধরে কাজে যাচ্ছি না।

এখন যে তাপপ্রবাহ চলছে তা আগে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত দিন চলত। এবার ২০ দিনের বেশি চলবে। এটা আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ। এছাড়া আবহাওয়ার আচরণের নতুন একটি দিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি থাকা। আবহাওয়ার এমন আচরণ অনেকটা মরুভূমির দেশগুলোর মতোআবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ ড. মো. আব্দুল মান্নান

একই অবস্থা কৃষকদের। তাপপ্রবাহের কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। এখন মাঠে রয়েছে বোরো মৌসুমের ধান। এটি দেশের চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম। তাপপ্রবাহের কারণে ধানের চিটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

dhakapost

সম্প্রতি বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখাসহ চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দেশে ৪৯টি জেলার কৃষকদের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে বোরো ধান রক্ষার জন্য জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে। এছাড়া আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ, গাছের শাখা-প্রশাখায় পানি স্প্রে করা, সবজির জমিতে আগামী এক সপ্তাহ ধরে মাটির ধরন বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী দুই থেকে তিনটি সেচের ব্যবস্থা এবং ফল ও সবজির চারা তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মালচিং ও সেচ নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান বলেন, ইতোমধ্যে হাওরসহ কিছু এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সে সব জায়গায় চলতি তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে, উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় ধান পরে লাগানো হয়েছে। সেখানে এ সময়ে খুব সাবধানে ধানের পরিচর্যা করতে হবে। অবশ্যই জমিতে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট