ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৯৮ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। জোটকে বাদ রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় ১৪ দলের শরিকরা। তাদের কেউ কেউ বেশ হতাশ হয়ে পড়েন।
সব প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে আজই। ১৪ দলের নেতাদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। জোটপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠকের সুযোগ পেয়েছেন তারা। এ বৈঠকে কপাল খুলতে পারে তাদের অনেকের। কে কোন আসনে ছাড় পেতে পারেন সেটি বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের একাধিক নেতা।
এবার হয়তো জোটে আগ্রহ নেই আওয়ামী লীগের। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথায় এমনই আভাস পান শরিকরা। এবার সেই অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। জোটপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ পেয়েছেন তারা। বৈঠকে কপাল খুলতে পারে তাদের। কে কোন আসনে ছাড় পেতে যাচ্ছেন, সেটিও এ বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন ১৪ দলের একাধিক নেতা
জানতে চাইলে তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী গতকাল রোববার রাতে বলেন, আগামীকাল (আজ) সন্ধ্যা ৬টায় আমরা গণভবনে যাচ্ছি। আমাদের জোটনেত্রী, আমাদের সভানেত্রী ডেকেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং জোটগত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনের পরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেটি কীভাবে মোকাবিলা করব, সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। কোন দল, কোন আসনে ছাড় পেতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।
জোটের নেতারা জানান, গত ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু শরিক দলগুলোর নেতাদের কাছ থেকে প্রার্থীদের তালিকা চান। সেই তালিকা জোটপ্রধানের কাছে উপস্থাপন করবেন জোটের সমন্বয়ক। কে কোন আসনে যোগ্য, সেটি নিয়ে আলোচনা করা হবে বৈঠকে। জোটপ্রধানের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদি আজ জোটের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত না হয় সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা তালিকা বিশ্লেষণ করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন। এর মধ্যে হয়তো জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। তারা আলাপ-আলোচনা করে জোটপ্রধানকে অবহিত করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিতে প্রায় ৫০ আসনে মনোনয়ন চেয়েছে ১৪ দলের শরিকরা। কেউ কম চেয়েছে, আবার কেউ বেশি আসন চেয়েছে। সেটি আজ চূড়ান্ত হতে পারে। ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ১০টি আসন, জাসদ থেকে ১৫টি, তরীকত ফেডারেশন থেকে ১৩টি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার জন্য চট্টগ্রাম- ১ আসনসহ প্রায় ৫০টি আসন চাওয়া হয়েছে। অনেকে আবার আলাদা করে যোগ্যদের চিহ্নিত করে দিয়েছেন
জানতে চাইলে তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আরও বলেন, গত শনিবার আমু (আমির হোসেন আমু) ভাই আমাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছেন। আমরা ১৩ জনের লিস্ট দিয়েছি। তার মধ্যে পাঁচজনকে চিহ্নিত করে দিয়েছি।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ১৪ দলের শরিকরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে। ইসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জোটের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ) ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রতিপক্ষ জোট থাকুক আর না থাকুক, বিএনপি নির্বাচনে আসুক কিংবা না আসুক, ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। ওবায়দুল কাদের কী বলেছেন, সেটি তিনিই ভালো জানেন। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। ওই চিঠিতে আরও বলা আছে, প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা শরিক দলের প্রার্থীরা ব্যবহার করতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ দলের শরিকদের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রত্যাহারের শেষ সময়ে শরিকদের আসন নিশ্চিত করা হবে। শরিকদের আপত্তি থাকলে কিছু আসনে নিজেদের প্রতীকে ভোট করার পরামর্শ দেবে আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সাল থেকে ১৪ দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। গত নির্বাচনে শরিক দলের আটজন নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও জোটের শীর্ষ নেতারা নৌকা প্রতীকে ভোট করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply