1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

ঢাকার টার্ন টেবিল নষ্ট, উল্টো ইঞ্জিন আঘাত করেছে এগারসিন্দুরকে

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ২৯২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

প্রতিটি যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে গাড়ির সামনের অংশে চালকের বসা খুবই জরুরি। বাংলাদেশ রেলওয়ের বেশ কিছু ইঞ্জিনে (লোকোমোটিভ) দুদিকে (যখন যে অংশ সামনে থাকে) বসার সুযোগ থাকলেও কিছু সিরিজের ইঞ্জিনে বসা যায় একদিকে। যাত্রা শুরুর প্রান্ত বা শেষ প্রান্ত থেকে এসব ইঞ্জিনের চালকের বসার অংশটি গন্তব্যের দিকে ঘুরিয়ে সামনে আনা হয়। যাতে দিনে ও বিশেষ করে রাতে চালকের ইঞ্জিনের সামনে দেখতে কোনো অসুবিধে না হয়। এমনকি কোনো সিগন্যালও যেন মিস না হয়।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশনের আউটারে যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর গোধূলি এক্সপ্রেসের শেষ কোচের দিকে আঘাত করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী একটি ট্রেন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

জানা গেছে, মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনটি ছিল উল্টো। এ অবস্থায় চালকের সিগন্যাল দেখতে অসুবিধা হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক লোকোমোটিভ মাস্টার (ট্রেন চালক)।

এদিকে বেশ কয়েক মাস ধরে ঢাকার লোকো শেডে থাকা ইঞ্জিন ঘোরানোর যন্ত্র (টার্ন টেবিল) নষ্ট। ফলে যেসব ইঞ্জিন সোজা হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে, সেগুলো ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পথে উল্টো যায়। যার কারণে চালকদের বসতে হয় ইঞ্জিনের পেছনের দিকে। এতে করে দিনে কিছুটা অসুবিধার মধ্যে কাজ করলেও রাতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় চালকদের। তারা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, উল্টো দিকে বসে ট্রেন চালাতে নিয়মিতই বিভিন্ন সমস্যা ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
লোকোমাস্টাররা ঢাকার টার্ন টেবিল ঠিক করার বিষয়টি বারবার রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে তারা গত ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পাহাড়তলী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম শাহরিয়ার চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান নির্ঝরের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে বলা হয়, অনেকদিন ধরে ঢাকা লোকোসেডের টার্ন টেবিল নষ্ট হয়ে আছে। ফলে লোকো টার্নিং না হওয়ায় সেখান থেকে ২৬০০, ২৯০০, ৩০০০ এরকম একমুখী সিরিজের লোকোগুলোর পেছনের দিক সামনে রেখে কাজ করে আসতে হয়। সার্বজনীন শ্রেণির এসব লোকো চালনাতে কোনো আইনগত বিধিনিষেধ না থাকলেও ট্রেন পরিচালনা করতে বিভিন্ন সমস্যা ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনেক স্থানে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সিগন্যাল, লেভেল ক্রসিং দেখা যায় না। ফলে যেকোনো সময় সিগন্যাল ওভারশ্যুট বা লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

dhakapost

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিশেষ করে আসন্ন শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশায় সিগন্যাল, লেভেল ক্রসিং দেখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে ট্রেনের রানিং টাইম বজায় রাখা যাবে না। তাছাড়া সিগন্যাল ওভারশ্যুট ও লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বিশেষ করে ৩০০০ সিরিজের লোকোগুলোর দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় এ ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। তাই নিরাপদ ট্রেন চালনার স্বার্থে অতি দ্রুত ঢাকা লোকোসেডের টার্ন টেবিল মেরামত অথবা লোকো টার্নিং করার বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

এই চিঠি পাওয়ার পর গত ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান নির্ঝর ঢাকা বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) জাহিদুল ইসলামকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে ঢাকা লোকোশেডের টার্ন টেবিল মেরামতের বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার করার স্বার্থে ঢাকা লোকোশেডের টার্ন টেবিলটি দ্রুত মেরামত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। এরপর দিনই ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটল।

টার্ন টেবিল নষ্ট থাকার বিষয়ে জানতে সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে একাধিকবার ঢাকার বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) জাহিদুল ইসলামকে কল করা হলে তিনি প্রতিবারই কল কেটে দেন।

এদিকে, সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব জংশনের আগে জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় চট্টগ্রামগামী কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর গোধূলি এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলওয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ভৈরব স্টেশনে প্রবেশ করছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারসিন্দুর ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল। জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় এগারসিন্দুর ট্রেনের শেষের দুই-তিনটি বগিতে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। মূলত সিগন্যাল ওভারশ্যুটের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে রেলেওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনটিকে স্টেশনের আউটারে থামতে সিগন্যাল দেওয়া হয়। ট্রেনটির লোকো মাস্টার (চালক) সংকেত অমান্য করে স্টেশনে ঢুকে পড়ায় ভৈরব থেকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষের তিনটি বগির সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কা লাগে।

dhakapost

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইঞ্জিন চালানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, এ দুর্ঘটনার পেছনে রেলওয়ের ব্যাপক দায় আছে। চালকও ভুল করেছে। যে ইঞ্জিন এগারসিন্দুরকে ধাক্কা দিয়েছে সেটির নম্বর ৩০২৮। এটিতে চালক একদিকে বসতে পারে। যখন ধাক্কা দেয় তখন এটি উল্টো ছিল। যার অর্থ, চালকের বসার অংশটি বগিমুখী ছিল। এই ইঞ্জিনের মোট দৈর্ঘ্য ৬৩ ফুট, যা অন্য ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি। যখন এটি উল্টো চালানো হয়, তখন এটিকে লং হুড বলে। লং হুডে ইঞ্জিন থাকলে চালকের আসন বাদে চালককে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ ফুট দূর থেকে সিগন্যাল দেখতে হয়। এই ইঞ্জিনের বডি লম্বা হওয়ায় সিগন্যাল ও চালকের মধ্যে অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ভৈরবের দুর্ঘটনাতেও এমনটি হয়েছে।

ছয় বছর পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকোমাস্টার জাহাঙ্গীর আলম ৩০২৮ নম্বর লোকোমোটিভ নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে রেলওয়েতে যোগ দেন। জাহাঙ্গীর আলমের বরাতে তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, লং হুড সমস্যার কারণে আউটারে থামার সিগন্যাল দেরিতে দেখেছেন। এত ব্রেক করতে দেরি হয়। দেখার পর মালবাহী ট্রেনটির গতি কমলেও সেটি থামেনি। পরে এগারসিন্দুর গোধূলি এক্সপ্রেসের শেষ তিন কোচে আঘাত করে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগে উদয়ন-তূর্ণা দুর্ঘটনার পর বেশির ভাগ ট্রেনের মাঝপথে আখাউড়ায় চালক/ক্রু পরিবর্তন করা হতো। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম ডবল লাইন হওয়ার পর ক্রু সংকট দেখিয়ে সব ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফুল রুটে কাজ করার জন্য ক্রুদের নির্দেশ দেওয়া হয়, পণ্যবাহী ট্রেনও এর আওতায় রয়েছে। যার কারণে ১৪-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা পণ্যবাহী ট্রেনে ডিউটি করতে হয় চালকদের।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার টার্ন টেবিল নষ্ট, মেরামত না করে উল্টো লোকো দিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। উল্টো লোকোমোটিভের ক্যাব থেকে ঠিকমতো সিগন্যাল রেলক্রসিং দেখা যায় না। লোকো মাস্টাররা লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো সমাধান হয়নি। ২৩ অক্টোবর ভৈরবে বিএফসিটি কন্টেইনার ট্রেনের লোকো উল্টো থাকায় সিগন্যাল দেখতে সমস্যা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোজা/শর্ট হুড হলে হয়ত দূর থেকে এগারো সিন্ধুর ট্রেন দেখে গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন চালক। যতদিন বড় বড় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে না, ততদিন দুর্ঘটনা ঘটার পরিবেশ বজায় থাকবে ও দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট