ভারতের বর্ধিত শুল্কারোপের পেঁয়াজ দেশে আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে অস্থির করে তুলেছে বাজার। গত দু’দিনে আমদানি পর্যায়ে ১০ টাকা এবং খুচরায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত এর মূল্য বাড়ানো হয়। অতিমুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজটি করেছে।
স্থলবন্দরগুলোর কাস্টমসের তথ্য মতে, ভারতের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কোনো পেঁয়াজ এখন পর্যন্ত দেশে প্রবেশ করেনি। মূল্য বৃদ্ধির পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনাজপুরে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অপর দিকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চীন, জাপান, ইরান, মিসর ও তুরস্কসহ যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে চাইলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। সোমবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা বলেছে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ আগস্ট শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যবস্থা হিসাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সংবাদের পরপর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা দেখা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি। বেনাপোলের আমদানিকারক জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক আল মামুন জানান, সবশেষ ভারত থেকে ৩৮ থেকে ৪৬ টাকায় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। বর্ধিত শুল্কারোপের পর পেঁয়াজ আমদানি করলে তার মূল্য পড়বে কেজি প্রতি ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। অথচ পুরোনো আমদানিকৃত পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে শতটাকা কেজি।
প্রশ্ন উঠেছে বাজার মনিটরিং দুর্বল ব্যবস্থা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মনিটরিং দুর্বল না। আসলে খোলা বাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বিষয়টি নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। আমরা কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছি না। আসলে সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন। তবে পেঁয়াজ সেলফলাইফ বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে সমস্যা থাকবে না।
রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যাম বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। যা দুই দিন আগে ৬০-৬৫ টাকা ছিল। বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫ টাকা, যা আগে ৪৫-৫৫ টাকা ছিল।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার দোকানে ১০০ টাকা। গত দুই দিন আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নয়াবাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. হামিদুর রহমান বলেন, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। আমরা সব দিকে অসহায়। পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কিভাবে বাড়ে?
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় দেশে পেঁয়াজের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটু সমস্যা হয়। তাই সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই একটি পরিসংখ্যান রাখা প্রয়োজন। এই সময় অন্য দেশ থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ দেশে আমদানির ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। তা না হয় পণ্যটি নিয়ে অসাধুরা কারসাজি করে। তাই এবার যাতে এমনটা না হয়, এজন্য সংশ্লিষ্টদের এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে আমরা কাজ করব। দাম হঠাৎ করে কেন বাড়ল সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনা করে অনিয়ম আছে কি না তা দেখা হবে। কোনো অসঙ্গতি পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।
বেনাপোল পরিস্থিতি: ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর এখনো নতুন করে আমদানি শুরু হয়নি। কিন্তু যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলসহ দুইদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা।
শুল্ক বাড়ানোর পর গত শনিবার ও রোববার কোনো পেঁয়াজ আমদানি করেনি আমদানিকারকরা। গত বৃহস্পতিবার সাড়ে ৪৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মাত্র ২০২ টন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণাতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আমদানি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, গত বৃহস্পতিবার এ বন্দর দিয়ে সাড়ে ৪৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। এখন যেসব পেঁয়াজ আসবে তা আগের এলসির। আর চালানগুলো দ্রুত খালাশের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। অতিরিক্ত শুল্ক করারোপের কোনো পেঁয়াজ এখনও আমদানি হয়নি।
হিলি পরিস্থিতি: আগের এলসি করার কারণে বিনা শুল্কে পেঁয়াজগুলো আমদানি হয়েছে। তবুও হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি নাসিক জাতের পেঁয়াজ ১৪ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। যা গত শুক্রবার বিক্রি হয় ৪৬ থেকে ৪৭ টাকায়।
অন্যদিকে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়, যা গতকালকে বিক্রি হয়েছিল ৪১ থেকে ৪৩ টাকা দরে। হিলি কাস্টমসের তথ্য মতে, রোববার ভারতীয় ৭টি ট্রাকে ২১১ টন এবং সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৪টি ট্রাকে ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে।
Leave a Reply