>> নেই বিদ্যুৎ ও সেলফোনের নেটওয়ার্ক
>> চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে এখনো হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি
>> চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন বান্দরবান
>> অপরিকল্পিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা
ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম। জেলার সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা এখন পানিবন্দি হয়ে আছেন। বন্যাকবলিত এসব এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র, পার্শ্ববর্তী স্কুল কিংবা উঁচু দালানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।
এছাড়া, বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় তিন দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ। এসব এলাকায় নেই মোবাইল নেটওয়ার্কও। ফলে কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। জীবিকার তাগিদে যারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তারা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে চিন্তিত। এছাড়া বন্যাকবলিত কোনো কোনো এলাকায় ডাকাতি কিংবা চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া সাতকানিয়ারা কেরানিহাট থেকে বান্দরবান সড়ক দিয়েও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই সড়কের কোনো কোনো অংশ গলা পানিতে তলিয়ে আছে। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজেও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক না থাকায় কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। এছাড়া লোহাগাড়ার উপজেলার আমিরাবাদ, পদুয়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম হাইওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাসিম খান বুধবার বিকেলে বলেন, পানি নামতে শুরু করলে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে এখনো হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি রয়েছে। এ কারণে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ভ্যান কিংবা পিকআপ পানির মধ্যেই চলছে। বৃষ্টি না হলে আগামীকাল যান চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।
দুই উপজেলায় ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার
এছাড়া বুধবার সকালে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের চুনতিপাড়া এলাকা আসহাব মিয়া (৬৫) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ চট্টলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সোমবার রাতে পদুয়া বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে আসহাব বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলে। সবশেষ বুধবার বিকেলে সাতকানিয়া পৌরসভার মির্জাখীলের বার্মা মার্কেট এলাকা থেকে তানভীর উদ্দিন (২০) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে বন্যার পানি দেখতে বের হয়ে পানিতে তলিয়ে যান।
সব দিকে হাহাকার
তিনদিন ধরে পানিবন্দি সাতকানিয়া লোহাগাড়া উপজেলায় তীব্র খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো দৃশ্যমান ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিতরণ করা হলেও তা খুবই অপ্রতুল। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে মোবাইল সংযোগ। পরিবার থেকে দূরে থাকা লোকজন স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
সাতকানিয়া কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, আমাদের পুরো বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। লোহাগাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের এলাকার লোকজন কিছু কেরানিহাট এলাকায় ও আশেপাশের স্কুল এবং উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। এছাড়া পানি ও খাবার সংকটে তারা অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।
সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও বর্তমান চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকা মো. মহিউদ্দিন বলেন, আজকে তিন দিন হলো পরিবারের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় কল করতে পারছি না। জানি না কী অবস্থায় আছেন। অজানা আশঙ্কায় রয়েছি।
অপরিকল্পিত রেললাইন ডুবিয়েছে দুই উপজেলা
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলার বুক চিরে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। এই রেললাইনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। অপরিকল্পিতভাবে রেললাইন করা হয়েছে দাবি করে স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন।
ফেসবুকে একটি ছবি দিয়ে জয়নাল আবেদীন নামে একজনে লেখেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার এই ছবিটি দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না। গত ১০০ বছরে নাকি এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি! চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কও পানির নিচে। টানা বৃষ্টিতে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বহু এলাকা প্লাবিত, ঘর-বাড়ি পানির নিচে। পরিচিত অনেককে কল করে পাইনি। ওখানে নেটওয়ার্ক, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কারণে টানা বৃষ্টির পানি সরতে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে শুনেছি। এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি হুমকিস্বরূপ হতে পারে। উন্নয়ন প্রকল্প অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের আগে চারদিকের পরিস্থিতি গবেষণা না করার কুফল ভোগ করতে হচ্ছে জনসাধারণকে। আড়ালের এই দুর্ভোগ উন্নয়নকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
Leave a Reply