বৈরী আবহাওয়ায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (৪ আগস্ট) জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পেয়ে কূলে আঘাত হানছে। সকাল থেকে পুরো উপকূলজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বৈরী পরিবেশের মধ্যেই পর্যটকেরা ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে গোসল করতে নেমেছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করেও পর্যটকদের সমুদ্র থেকে তুলে আনতে পারেননি।
সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, উত্তাল সমুদ্রেই শত শত পর্যটক সাগরে গোসল করতে নেমেছেন। এ সময় বেসরকারি লাইফগার্ড কর্মীদের বালুচরে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের উঠে আসার জন্য আহ্বান জানাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া উত্তাল সাগরে নামতে নিষেধ করলেও সেদিকে কারও কোনো নজর নেই।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের লাইফগার্ড টিম লিডার মো. লিটন খান বলেন, সকাল ৭টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পুরো সৈকতের ২ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২-৩ হাজার পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অনেক পর্যটক গোসল করতে নামছেন। পর্যটকদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। সকাল থেকে ঢেউয়ের গতি স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। তাই ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় আমরা সবাইকে সতর্ক করার চেষ্টা করছি।
সকাল ১০টার দিকে বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় জিও ব্যাগের ওপর থেকে ছিটকে পড়েন খুলনার খালিশপুর এলাকার কলেজছাত্র আশরাফুল ইসলাম। পরে লাইফগার্ড কর্মীরা সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আশরাফুলকে উদ্ধার করেন।
আশরাফুল জানান, পরিবারের সঙ্গেই তিনি সকালে সমুদ্রে নামেন। কিন্তু ঢেউয়ের ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়বেন, সেটা বুঝতে পারেননি। নিষেধাজ্ঞা না মেনে সমুদ্রে নামা ঠিক হয়নি।
ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা নিয়ামত উল্লাহ (৪৭) বলেন, সাগরের জলে শরীর ভেজানোর জন্য এত দূর থেকে এসেছি। সৈকতে নেমে দেখি বৃষ্টি, সমুদ্রও উত্তাল। সবাই নেমে গোসল করছেন দেখে আমিও নেমেছি। কিন্তু ঢেউয়ের তাণ্ডবে আমার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই উঠে আসছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৈরী পরিবেশে সমুদ্র এখন উত্তাল। তাই পর্যটকরা যেন সমুদ্রে নামতে না পারেন, সে জন্য সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। বালুচরে মাইকিং করে প্রচারণাও চলছে। তারপরও কিছু পর্যটক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল সাগরে ঝাঁপ দিচ্ছেন। তবে যে কোনো অপ্রীতিকর এবং ছোট-বড় দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, সকাল থেকে পটুয়াখালীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলে ঝোড়ো হাওয়াসহ আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ জন্য সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে সর্বোচ্চ চার ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে উপকূলে। এ জন্য পর্যটক ও সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদের চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply