1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

নেতৃত্বের হাত বদলে বিশ্বকাপ স্বপ্নেও আধার নেমে এলো?

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৪৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

তামিম ইকবালের চেহারায় গুমোট ভাব। তার সামনে ক্যামেরার ভিড়, ল্যান্সের আলো পড়ছে চোখে।

তামিম যেন পথ খুঁজলেন কখন ছেড়ে যায় এ প্রান্তর। মাঝে হাত নাড়ালেন পরিচিত দুয়েকজন সাংবাদিককে দেখে।
তার গাড়ি কিংবা সোডিয়ামের কোনো আলোয়ও রাতের গভীর আধার ঢাকা পড়ছে না ঠিকঠাক। তামিম খানিকক্ষণ আগে যে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন, তাতে কি বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নেও জমা হলো অন্ধকার?
কালো কাচে ঘেরা গাড়িতে করে এসেছিলেন।

গাঢ় নেভি ব্লু শার্টের আর কালো প্যান্টের সঙ্গে মাথায় একটা ক্যাপ। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর এসে প্রথমেই জানালেন ‘দলের স্বার্থে’ নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা। হুড়োহুড়ির ভিড়েই তামিম বললেন মন খারাপের গল্প।
কিন্তু হয়তো বললেন না লুকিয়ে কিংবা মুছে দেওয়া স্বপ্নের কথা। লম্বা ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই ছিলেন নেতৃত্বের প্রাদপ্রদীপের আড়ালের বাইরে। ‘ক্যাপ্টেন ম্যাটেরিয়াল’ বলে খ্যাতি তো ছিল না কখনোই। তবুও তামিমের কাঁধেই ভর করতে হয়েছিল ২০২০ সালের ৯ মার্চের এক বোর্ড সভার পর।

মাশরাফি বিন মুর্তজা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাফল্য অথবা স্বপ্ন তুলে দিয়েছিলেন অনেক দূরে। তামিম এরপর ‘খুব ভালো’ কিছু করতে না পারলে সেটি ছিল অবধারিত ব্যর্থতা। তিনি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন। কিন্তু যাত্রা শুরু করতে পারেননি সহজে। করোনায় প্রায় বছরখানেক বিরতির পর ‘২১ সালের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হয় তামিমের অধিনায়কত্ব পর্ব, তিন ম্যাচের সিরিজের সবগুলোই জেতে বাংলাদেশ।

ওই শুরু, দিন গেছে, বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে, একটু একটু করে বেড়েছে স্বপ্নের ডালপালা। এশিয়া কাপ ছাপিয়ে কখনো কখনো পরিধি পৌঁছেছে বিশ্বকাপে। সেমিফাইনাল থেকে সেটিও একটু একটু করে ছুটেছে ‘চ্যাম্পিয়ন কেন নয়…’ এর দিকে। দলকেও বেশ গোছানো মনে হচ্ছিলো।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে তাদের বিপক্ষে সিরিজ জয়, প্রথমবারের মতো। ভারতকে হারানো ঘরের মাঠে। ওয়ানডে সিরিজ জেতাকে বানিয়ে ফেলা নিয়মিত কোনো ঘটনা। অথবা ওয়ানডে সুপার লিগে তৃতীয় হয়ে শেষ করা; আড়ালে-আবডালে বলা স্বপ্নটাকে নিয়ে আসা সামনেও। এক-দুজন করে ক্রিকেটার, বোর্ড কর্মকর্তারা নিয়মিতই বলেন বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথাও।

তামিম ইকবালও নিশ্চয়ই অনেক অনেক ছবি এঁকে রেখেছিলেন কল্পনায়। এখন তিনি খুঁজে ফিরতে পারেন কেবল দূরে সরিয়ে রাখা রাবারটা। জীবনের গতিপথ কত দ্রুত বদলে যেতে পারে, সেটি তামিম ভাবতে পেরেছেন কি না তিনিই ভালো জানেন। জানলে হয়তো রাবারটা রেখেছেন খুব কাছে, নয়তো না।

মাঠের পারফরম্যান্সেই ক্রিকেট এখন অন্তত অথবা কখনোই আর চলে না, এগিয়ে যাওয়ায় দরকার নানা আনুসাঙ্গিকতারও। শেষ মাস ছয়েক সেসবে কেবল অস্বস্তিই ছড়িয়েছে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে তামিম ইকবাল, এমন কি দুজনের কথা বলাও বন্ধ; জানান খোদ বোর্ড সভাপতি। প্রায় আধঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনের লম্বা সময় তামিমকে ব্যাখ্যা দিতে হয় তার। যেদিন নেতৃত্ব ছাড়লেন, সেদিনও তো এলো প্রসঙ্গটা!

ওই পরিস্থিতি সামলে উঠতে উঠতেই হাজির হয় তামিম ইকবালের চোট। ওয়ানডে অধিনায়ককে নিয়ে নানা কথা আসতে থাকে চারপাশে, এমনকি বোর্ড থেকেও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথেই তামিম ইকবাল ঘোষণা দেন ক্রিকেট থেকে অবসরের।

গুমোট এক দ্বীপে যেন হঠাৎ বজ্রপাতে নেমে এসে এলোমেলো করে দিয়ে যায় সব। তামিম অবশ্য পরে ফেরেন, তাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার হয়। তামিম যান দেড়মাসের ছুটিতে। দীর্ঘদিন ধরে ভোগানো পিঠের ব্যথার চিকিৎসাও করে আসেন লন্ডনে। ফিরেছিলেন রোববার, বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিলেন নেতৃত্ব ছাড়ার। কেন?

তামিমের জবাব ছিল এমন, ‘আমার ইনজুরি একটা ইস্যু, যে ইনজেকশনটা নিয়েছি ওটা অনেকটা হিট অ্যান্ড মিসের মতো। আমার কাছে মনে হয় যে দল আগে, দলের কথা চিন্তা করে আমার নেতৃত্ব ছাড়াটা সবচেয়ে ভালো বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। উনি বুঝেছেন। মূল বিষয় হলো দলের ভালোর জন্য আমি নেতৃত্ব ছাড়ছি; একজন ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে চাই। ’

দলকে গুছিয়ে এনে যেখানে ছাড়ছেন, একটু কি আফসোসও নেই? তামিম এই প্রশ্নের উত্তরেও লুকাননি কিছু, ‘আমি যদি বলি যে আমি নাখোশ না, তাহলে মিথ্যা হবে কারণ এতদিন একটা দলের সঙ্গে ছিলাম। ৯০ ভাগ মানুষ স্বার্থপর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যখন দল সামনে আসে তখন স্বার্থপরের ব্যাপারটা দূরে রাখতে হবে। ’

এতদিন ধরে বেশ জোরেশোরেই সহ-অধিনায়ককে নেতৃত্বে আনার কথা বলছিলেন বোর্ড সভাপতি। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে সুর কিছুটা বদলে জানিয়ছেন আলোচনার কথা। সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে আর কারে নাম এলে সেটি হবেন সাকিব আল হাসান।

লিটন অধিনায়ক হিসেবে সফল এখন অবধি। সবসময়ই অবশ্য আলাদা ফরম্যাটে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত হয়ে। তার মাথা ভালো কাজ করে। জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়কের ভাষায় ‘খেলার ভেতর অনেক থাকে লিটন’। কিন্তু বিশ্বকাপ মানে আরও বড় চাপ। এক-দুটি ম্যাচ কিংবা একটি দ্বিপাক্ষীক সিরিজের চেয়ে অনেক বড় ক্যানভাস।

সেটিও এমন একটি মঞ্চে, যখন বাংলাদেশের প্রত্যাশা প্রায় আকাশছোঁয়া। চাপ, দল সামলানো, সামনে তাকানোর দৃঢ়তা, লড়াই করার স্পৃহা লিটনের হয়তো আছে; কিন্তু এখনই দেখাতে পারবেন কি না এ নিয়ে সংশয় থাকছেই। তারও আগে নাম আসবে সাকিব আল হাসানের।

তিনি টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক। অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব গুণ কোনো কিছু নিয়েই সংশয় নেই। তবে হুট করে তিনি অধিনায়কত্ব করতে আগ্রহী হবেন কি না, এ নিয়ে দ্বিধা আছে। তাও আবার এমন একজন নেতৃত্ব ছেড়েছেন, যার সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব নিয়ে ড্রেসিংরুমে অস্বস্তি আছে; এমন খবরও ছড়িয়েছে নিয়মিত।

কয়েকদিন আগে জোর দিয়েই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা গেছে। তামিমের অবসর নাটকীয়তার পর এখন নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া। ড্রেসিংরুমের অস্বস্তির খবর কিংবা কোচের চাওয়া। এখন কি স্বপ্নটাতেও আধার নামিয়েছে? বৃহস্পতিবার রাতে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিসিবি সভাপতিকেও।

তিনি জবাব দিয়েছেন এভাবে, ‘ভালো করার সম্ভাবনা না থাকার কারণ দেখি না। কমে থাকলে এখন ওটাকে আবার ঠিক করতে হবে। চ্যালেঞ্জ থাকবে ওটাকে আবার ফিরিয়ে আনা। তামিম যদি প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে না থাকা (অবসর) তাহলে সমস্যা হতো। যেহেতু এখন সে ফিরেছে সে আগের চেয়ে ভালো। ও অধিনায়ক না থাকা বোর্ডের জন্য সমস্যা। এখন একজনকে অধিনায়ক বানাবো কিন্তু যাকেই বানাই না কেন তামিম-সাকিব-মুশফিকরা সাপোর্টিং দায়িত্বে থাকবে। ’

‘সমর্থন’ আর নেতৃত্ব দেওয়া এক নয়, বোর্ড সভাপতি ভালোই জানেন। ব্যক্তিত্বের সংঘাতও এখন সবখানেই নিয়মিত ঘটনা। তাতে নেতৃত্ব বদল বাংলাদেশের ক্রিকেটে সত্যিই আধার নামিয়ে দিতে পারে। সেটি যেন না হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা এখন আশা করতে পারেন এতটুকু। ক্যামেরার সামনে তামিমের হাসিমুখের মতো পুরো জাতীয় দলে সুখ থাকবে; প্রত্যাশা করতে পারেন এমন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট