রাত পোহালেই ১০ মহাররম। এই দিনে কারবালা প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এর শাহাদাতের শোককে ধারণ করে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকে। এ মিছিলের জন্য প্রস্তুত পুরান ঢাকার বিবিকা রওজা।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরাশগঞ্জে বিবিকা রওজায় সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু ভক্ত জিয়ারত করছেন মূল বিবিকা রওজা, কেউ মনের বাসনা পূরণ করার জন্য করছেন মানত, কেউবা মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালিয়ে নিজেদের আবেগ প্রকাশ করছেন। এখানে আসা বেশিরভাগ ভক্তই নারী।
এছাড়াও ৬ মহররম থেকে খালি পায়ে পুরান ঢাকার অলিগলিতে হেঁটে নিজেদের আবেগ প্রকাশ করে বেড়াচ্ছেন শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। শুধু তাই নয়, শিশুরাও গায়ে সাদা কালো বেড়ি পরে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছে।
বিবিকা রওজায় অবস্থানরত শিয়ারা বিশ্বাস করেন, ইমাম হোসেন (রা.) যখন কারবালার ময়দানে শহীদ হন, তখন তার মা মহানবী (সা.) এর কন্যা ফাতেমা (রা.) ছেলেকে দেখতে অদৃশ্যভাবে ছুটে আসেন কারবালায়। তিনি এসে তার শহীদ সন্তান হোসেনকে দেখে যান। একে বলা হয় মারেফত। সেই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনকে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পালন করেন শিয়া সম্প্রদায়।
বিবিকা রওজার খাদেম বাবলু মিয়া বলেন, আজ বাদ মাগরিব প্রথম শোক মিছিল হবে। হেঁটে মিছিলটি বিবিকা রওজা থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, ডাইলপট্টি ও সূত্রাপুর হয়ে রওজায় এসে সমাপ্ত হবে। মিছিল হবে ঘোড়া নিয়ে। এ ঘোড়াকে বলা হয় দুলদুল ঘোড়া। ঘোড়ার পাশাপাশি থাকবে নিশান বা পতাকা এবং তাজিয়া। এ তাজিয়া মিছিলে শিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা অংশ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীকাল (শনিবার) দৌড়ে দৌড়ে মূল মিছিলটি নিয়ে এখান থেকে বিকেল ৩টায় রওনা দেব। মিছিলটি সদরঘাট থেকে মিটফোর্ড হয়ে আজিমপুর ও নিউমার্কেট হয়ে ঝিগাতলার বিডিআর গেটে গিয়ে শেষ হবে। তাজিয়া মিছিলের প্রতীক থাকবে একটি ঘর। আর সেই ঘরের ভেতর ইমাম হাসান ও হোসেনের প্রতীকী কবর থাকবে। আর সবার হাতে থাকবে নিশান। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে।
সবুজ নামের এক ভক্ত বলেন, শত শত বছর ধরে ইমাম হোসেন (রা.) শহীদ হওয়ার দিনটিকে ঘিরে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। এ মিছিল মূলত শোক মিছিল। তাজিয়া তৈরি করা হয় ইমাম হোসেন (রা) এর সমাধির আদলে। তাজিয়া মিছিলে ভক্তরা শোকের গান গাইতে গাইতে বুক চাপড়ে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে বিলাপ করেন।
রাজধানীর সবচেয়ে পুরোনো ইমামবাড়া পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা। এটি ১৬শ সালে নির্মিত হয়। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর কন্যা ও ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর বিবি মা ফাতেমা (রা.) এর নামে নির্মিত এ রওজা। প্রতি বছর মহররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত সময়ে আশুরা উপলক্ষ্যে জমজমাট হয়ে ওঠে বিবিকা রওজা।
Leave a Reply