আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মিটিং-মিছিল-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গেল কয়েকদিন আগেও রাজনৈতিক দলগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ বা কর্মসূচিও করেছে।
ঢাকায় আয়োজিত রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হলেও ঢাকার বাইরে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হতে দেখা গেছে।
দেশের রাজনৈতিক আলোচনা এখন শুধু দোকানের চায়ের কাপে সীমাবদ্ধ নেই।
নির্বাচনী আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে সারাদেশে এক রকম রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
‘সরকারের পদত্যাগ এবং সংসদ বিপুপ্তির এক দফা এক দাবি’কে সামনে রেখে আগামী শুক্রবার (২৮ জুলাই) ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
এ সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থেকেও দলগুলোর সমর্থকরা অংশ নেবেন। বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো নৈরাজ্য কেউ করতে না পারে, সেজন্য একই দিনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেবেন।
এদিকে রাজনৈতিক এ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের ছদ্মবেশে যাতে তৃতীয় কোনো পক্ষের কেউ প্রবেশ করতে না পারে এবং কোনা বিশৃঙ্খলা-নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকার জনগণের নিরাপত্তায় ডিএমপি প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, যে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে সর্বদা কাজ করছেন। ঢাকার প্রবেশমুখ ও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হবে। পোশাকে সাদা পোশাকে পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরাও কড়া নজরদারি করবেন। এছাড়া সাইবার স্পেসেও মনিটরিং করবে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকরা ঢাকায় ঢুকবেন। এজন্য ওই দিন সকাল থেকেই রাজধানী ও বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার সবগুলো প্রবেশদারে তল্লশি চৌকি স্থাপন করা হবে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হবে। কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশির আওতায় আনা হবে। চেকপোস্টগুলোতে ডকস্কোয়ার্ডও মোতায়েন থাকবে। পোশাকে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্যরাও নজরদারি করবেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হবে পুরো রাজধানীর পরিস্থিতি। সাইবার স্পেসেও কড়া নজরদারি থাকবে। বিএনপির মহাসমাবেশ বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে গুজব ছড়াতে না পারে, সেদিকটিও মনিটর করা হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশ নিতে আসবেন। তবে সমর্থক বেশে কেউ কেউ অস্ত্র-বিস্ফোরক সঙ্গে আনতে পারেন। কেউ যাতে রাজধানীতে নাশকতার চেষ্টায় কোনো অস্ত্র বা বিস্ফোরক বহন করতে না পারেন, সেজন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও কড়া নজরদারি করবেন। এর জন্য সমাবেশের আগের দিন থেকেই বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুরো রাজধানী জুড়েই র্যাব-পুলিশের টহল টিম মোতায়েন থাকবে। এ টহল কার্যক্রম বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে, যাতে কেউ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বা নাশকতা সৃষ্টির মতো কোনো সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন। চেকপোস্ট স্থাপন করে প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সার্বিকভাবে ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত পেট্রোলিং করব, চেকপোস্ট স্থাপন করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করব।
তিনি বলেন, এছাড়া সাইবার পেট্রোলিং করব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাতে কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য নজরদারি থাকবে।
বিএনপির মহাসমাবেশের তারিখ পরিবর্তন:
গত ২২ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে এক দফা দাবিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য গত ২৩ জুলাই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরে গিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়।
তবে কর্মদিবস (ওয়ার্কিং ডে), যানজট, জনদুর্ভোগ বিবেচনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে মহাসমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিকে বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে একদিন পিছিয়ে ছুটির দিন শুক্রবার (২৮ জুলাই) নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পূণঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে আগামী ২৮ জুলাই শুক্রবার-সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেলা ২টায় নয়াপল্টনে পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিচ্ছি।
এদিকে শুক্রবার (২৮ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের ঘোষণার প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, গোলাপবাগে সমাবেশ না করলে, নতুন করে আবেদন করতে হবে বিএনপিকে।
ছুটির দিনে বিএনপিকে নয়াপল্টন সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নয়াপল্টনে কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। ছুটির দিনও যদি তারা করতে চায়, সে জন্যও নতুন করে আবেদন করতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে তাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
Leave a Reply