দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে চলেছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা এক মিনিটে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে পাঁচজন জল্লাদ, ফাঁসির মঞ্চ ও লাশবাহী গাড়িও প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারাগারের একটি সূত্র। এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই আসামির আত্মীয় স্বজন শেষবারের মতো দেখা করেছেন।
সূত্র জানায়, দুই আসামির ফাঁসির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। বিদেশ থেকে আনা হয়েছে ফাঁসির দড়ি। ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদ আলমগীরের নেতৃত্বে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পাঁচজন জল্লাদ। মরদেহ পরিবহনের জন্য আলাদা দুটি অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে কারা মসজিদের ইমামকেও। তবে এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এ দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়েছেন। সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তবে বিচার নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিন বলেন, ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। মাঝখানে তারকাটা ছিল। ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ছেলে দোয়া চেয়েছে।
তবে আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবার শেষ সাক্ষাৎ করলেও কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন নি। অনেকটা নীরবেই কারাগার ত্যাগ করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক ড. এস তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিভাগের পদোন্নতি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তিনি খুনের শিকার হন। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালামকে ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়াও রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন হাইকোর্ট।
এরপর আবারও রিভিউ আবেদন করেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি। তবে এ বছরের ২ মার্চ রাবি অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুজনের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল তাই বহাল থাকে আপিল বিভাগে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও।
পরে দণ্ডিত এ দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরে সেই আবেদনও খারিজ করে দেন বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরবর্তীতে কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে এ ঘটনায় দোষ স্বীকার করে নিজেদের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন জানান। তবে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন।
Leave a Reply