আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিশ্রুতি ছিল গত ঈদের ন্যায় এবারের ঈদেও স্বস্তির ঈদযাত্রা হবে। কিন্তু ঘোষিত সেই স্বস্তির ঈদযাত্রা রূপ নিয়েছে বিষাদে। উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কে গাড়ির চাপ ও যানজটের কারণে গাবতলী থেকে প্রত্যেকটি রুটে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ শিডিউলবিপর্যয়।
গাবতলী বাস টার্মিনালে কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে জানা গেছে, রাজধানীর গাবতলী থেকে কাউন্টারের কাউন্টারের ঠাসা যাত্রী। নির্ধারিত সময় ছাড়ছে না বাস। অধিকাংশ বাস দেড় থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট চালক হেলপার ও টিকিট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ এলেঙ্গা যমুনা সেতুর টোল প্লাজায় ব্যাপক যানজট। সেই যানজট ঠেলে ঢাকায় ফিরতেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে দেরি হচ্ছে। এরপর আমিন বাজার থেকে টেকনিক্যাল ঘুরে গাবতলী আসতে আরও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগছে। যে কারণে অধিকাংশ রুটে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গাবতলী রজব আলী মার্কেটে কথা হয় গাইবান্ধা রোডের আল হামরা এসি বাসের যাত্রী চমকের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এ যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি আনন্দ লাগার কথা। কিন্তু কাউন্টারে আসার পরে মনটা বিষাদে ভরে গেল। কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে, যে এসি বাসে গাবতলী থেকে গাইবান্ধা যাব সে বাসটি এখনো রয়েছে বাইপাল। রাত সাড়ে বারোটার আগে বাসটি ছাড়া কোনো সম্ভাবনা নেই। অথচ বাসটি রাইট টাইম ছিল রাত সাড়ে নয়টা। আমার মতোই দশা অধিকাংশ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর।
রজব আলী মার্কেটের এস আর পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা রানা বলেন, যানজট ভেবে তাদের পরিকল্পনা ছিল তাদের একটু সমস্যা কম হয়েছে। অন্যান্য পরিবহনের সমস্যা বেশি আমাদের একটু কম। তারপরও প্রত্যেকটি রুটে বাস নির্ধারিত সময় থেকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকটি রুটেতে শিডিউলবিপর্যয় ভেবে বিকল্প বাস রাখা হয়েছে। কিন্তু আমিন বাজার থেকে টেকনিক্যাল হয়ে গাবতলী আসতেই তো সময় লাগতেছে দেড়, দুই ঘণ্টা।
ঢাকা রাজশাহী রুটের সিংড়া এলিগেন্স পরিবহনের ড্রাইভার মোহাম্মদ শামীম বলেন, রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা আসতে প্রায় প্রত্যেকটি পয়েন্টে যানজট। আবার ঢাকায় ঢুকে আমিন বাজার থেকে টেকনিক্যাল হয়ে গাবতলী রজব আলী মার্কেটে আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগছে। আমাদের কোনো বাস শিডিউল মেনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে পারছে না, সময় লাগছে।
আল হামরা পরিবহনের রজব আলী মার্কেটের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় প্রত্যেকবারই ভাবি যে ঈদের গাড়ি ছাড়ব না। কিন্তু নানামুখী চাপে গাড়ি ছাড়তে হয়। এখন যাত্রীদের নানা কথা হজম করতে হচ্ছে কিছু করার নাই। রাস্তায় যানজট গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বাস ফিরতেই তো দেরি হচ্ছে। প্রত্যেকটি রুটে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা করে শিডিউলবিপর্যয়।
রুবা নামে আল হামরা পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, বাস কাউন্টারে অনেকবার ফোন করেছি, জানার চেষ্টা করেছি নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়বে নাকি দেরি হবে। যদি দেরি হয় তাহলে দেরিতে কাউন্টারে আসবে। কিন্তু কাউন্টার থেকে ফোন রিসিভ করা হয়নি। বাধ্য হয়ে কাউন্টারে এসেছি কিন্তু এখন শুনি কমপক্ষে তিন ঘণ্টা দেরি হবে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে ঠাসা কাউন্টারে ভ্যাপসা গরমে বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
পাবনা এক্সপ্রেসের যাত্রী আলিফ বলেন, স্ত্রী দুই সন্তানসহ কাউন্টারে এসেছি তাও দেড় ঘণ্টা হলো। কিন্তু বাসের কোনো খবরই নাই। অথচ বাস রাত সাড়ে ৯টায় ছাড়ার কথা। ভোগান্তি কাকে বলে তবে বোঝেন।
Leave a Reply