আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আগামী কাল শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে দিকে এই রায় দেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মুহম্মদ আলী মাজহার বিচারপতি আজহার মিনাল্লা।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সর্বোচ্চ আদালত ইমরান খানকে এক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার আদেশ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল আদেশে বলেছিলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত ইমরান খানের গ্রেপ্তার এবং তার জেরে সৃষ্ট অস্থিরতাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। আজ এই বিষয়ে একটি যথাযথ আদেশ আদালত ইস্যু করবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো’র (ন্যাব) একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির করে।
ইমরানকে হাজির করাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় আদালত ভবনের ভেতরে ও বাইরের চত্বরে। পুলিশ ও রেঞ্জার্সের বেশ কয়েকটি কন্টিনজেন্টের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় রেঞ্জার্সের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকেও।
পাকিস্তানের দৈনিক ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট ভবনের ১ নম্বর কোর্টরুমে হয়েছে শুনানি এবং কেবল আইনজীবী ও সাংবাদিকদেরই শুনানিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো’র (ন্যাব) একটি যৌথ দল। গত ১ মে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ন্যাব।
ন্যাবের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজির আহমেদ বাট স্বাক্ষরিত ওই পরোয়ানায় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সোহাওয়া শহরে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে ব্রিটেনের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে রাষ্ঠীয় কোষাগার থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন ইমরান খান, তার স্ত্রী বুশরা বিবি এবং ইমরানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কয়েক জন জেষ্ঠ্য নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জমি বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকেও ইমরান ও তার স্ত্রী অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় পরোয়ানায়।
আদালত অবমাননা করেছে ন্যাব
সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির করার পর তার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সৌজন্য বিনিময় শেষে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি আদালতে উপস্থিত হন, তার অর্থ হলো তিনি আদালতের কাছে আত্মসমর্পন করছেন।’
‘আর যখন কোনো ব্যক্তি নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন, তখন কীভাবে, কোন আইনের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়? যদি ৯০ থেকে ১০০ জন মানুষ হট্টগোল করতে করতে আদালত থেকে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে আদালতের সম্মান বলে কি কিছু থাকে?’
‘সম্প্রতি ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ঘটে যাওয়া ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট খুবই অসন্তুষ্ট এবং উদ্বিগ্ন; আমরা জানতে পেরেছি, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের আগে ন্যাব হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি।
‘ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে এবং ন্যাব যা করেছে— তা দেশের আদালত ও বিচারব্যবস্থার প্রতি অবমাননামূলক।’
এ সময় সুপ্রিম কোর্টে ন্যাবের আইনজীবী প্রসিকিউটর জেনারেল আসগর হায়দার বলেন, ন্যাব সমসময়ই দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জারি করা পরোয়ানার আওতায়েই ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইমরান খানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান হায়দার।
তার এই বক্তব্যের পর বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপতি আজহার মিনাল্লাহ প্রশ্ন করেন, ‘ন্যাব কি (ইমরান খানকে) গ্রেপ্তার করার আগে হাইকোর্ট রেজিস্ট্রারের কাছে অনুমতি নিয়েছিল? আমরা যদ্দুর জানি, নেয়নি।’
‘ন্যাবের বিরুদ্ধে বহুবার পলিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে, আদালত থেকে একাধিকবার এ সম্পর্কিত সতর্কতাও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেসব থেকে কোনো শিক্ষা ন্যাব নেয়নি।’
Leave a Reply