দেশের মানুষের বাস্তবায়িত স্বপ্ন পদ্মা সেতু। এ সেতু নির্মাণ ও খুলে দেওয়ার পর কোটিপতি থেকে প্রান্তিক সব শ্রেণির মানুষ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করছেন।
সে ধারাবাহিকতায় বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে আরেক স্বপ্ন; শুরু হচ্ছে রেল চলাচল। আজ মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলবে।
তবে, পুরোপুরি ভাবে নয়, ট্রায়ালের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে রেল উঠছে আজ। এ রেলপথ চালু হলে ঢাকা থেকে যশোর-খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ লক্ষ্যে ফরিদপুরে ভাঙ্গা উপজেলার উদ্দেশ্যে আধুনিক একটি ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। সার্ভিসটির নাম ‘পদ্মা ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেন’।
গতকাল সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এর আগে সৈয়দপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি রাজবাড়ী রেল স্টেশন প্লাটফর্মে আসে। রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা স্টেশনের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। ট্রেনটি ভাঙ্গা টু মাওয়া ভায়া পদ্মা সেতু রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালনা করা হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেন চালুর আগে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী বিভাগের চিফ অপারেটিং সুপরিটেন্ডেন্ট আহসান উল্লাহ ভূইয়া, পাকশী বিভাগের ডিভিশনাল রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সূফী নূর মোহাম্মদ, ডিভিশনাল ট্রান্সপোর্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন, ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আশীষ কুমার মণ্ডল, সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম।
আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর রাজবাড়ী থেকে পদ্মা ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেনটি চালিয়ে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা করেন চালক আবুল কাশেম।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা নদীর ওপর সড়ক সেতুর উদ্বোধন হলেও অপেক্ষা ছিল ট্রেন পথ চালুর। এ রুট পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমবে।
রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। তখন ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব হবে ১৬৯ কিলোমিটার। দূরত্ব ও ভোগান্তি কমবে কুষ্টিয়া, দর্শনার সঙ্গেও। অন্যদিকে ফরিদপুর, রাজবাড়ি রুটে নতুন পথে নতুন রেলযাত্রী তৈরি হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গেও রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে।
এ বিষয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পুরো ৪২ কিলোমিটার পথে গ্যাংকার চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তা ছাড়া পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ; মাওয়া থেকে ভাঙ্গার অগ্রগতি ৯২ ভাগ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।
এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিংবিহীন ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ ও পুরনো ছয়টি স্টেশনের কাজ।
প্রসঙ্গত, দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে প্রথমে যে পরিকল্পনা করা হয়, তাতে রেলওয়ে ট্রাক বসানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর রেল চালুর বিষয়টি যুক্ত করা হয়। সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করায় ঢাকার সঙ্গে যশোর রেললাইন নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
Leave a Reply