1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

১০৫ কোটি টাকা ফেরত চান ৩৫ হাজার গ্রাহক

রিপোটারের নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৪০৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেলশাদ আলী নিজের উপার্জনের সবটুকুই রেখেছিলেন মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিওতে। নিজের ৩৬ লাখ ও দুই ছেলের ১০ লাখ মিলে মোট জমা রেখেছিলেন ৪৬ লাখ টাকা। গত পাঁচ মাস ধরে নিজের পুরো জীবনের উপার্জনের সব অর্থ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কাঁদছেন তিনি। অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠানো নিয়েও।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেশ চন্দ্র দাস নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মিলে মোট ২৪ লাখ ৫০ হাজার জমা রেখেছিলেন ওই এনজিওতে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী রমেশ চন্দ্র দাসকে এখন জীবনযুদ্ধ করতে হচ্ছে জমা রাখা টাকা ফেরত পেতে। ইচ্ছে ছিল ভালোভাবে বাড়ি নির্মাণ করবেন। তাও আর হবে কিনা তা এখন নিশ্চিত নয়।

অন্যদিকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত রোকেয়া বেগম ১৩ লাখ টাকা রেখেছিলেন দুই মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে। সেই টাকা না পেয়ে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন স্বামী। বিয়ে দিতে পারছেন না দুই মেয়েকে।

দেলশাদ আলী, রমেশ চন্দ্র দাস ও রোকেয়া বেগমের মতোই অবস্থা মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৫ হাজার গ্রাহকের। এসব গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নানা রকম পাঁয়তারা করছে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনিবন্ধিত ও অবৈধ এনজিও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় থাকা ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

শনিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আমানতের টাকা ফেরতের দাবি জানান গ্রাহকরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার গ্রাহক নাসিমুদ্দিন।

তিনি বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সাধারণ জনগণকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১,২০০ টাকা লাভ দেওয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়া মাত্র ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আজ-কাল করে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিভিন্ন কৌশলে সময় পার করে। টাকা না দিতে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ আটকের নাটক করেন।

মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় জেলে থাকলেও জামিনে মুক্তি চান না দাবি করে ভুক্তভোগী নাসিমুদ্দিন আরও বলেন, আটকের পর থেকে জেল থেকে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার আটকের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের পুরো লেনদেন এবং দৈনিক হিসাব-নিকাশের অনলাইন সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৫ মাস থেকে লাভসহ আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ রয়েছে। অথচ জনগণের টাকা নিয়ে মাসুদ রানা ও তার পরিবারের লোকজন টাকার পাহাড় গড়েছে। মাসুদ রানা আটকের পর থেকেই পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। তারা জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট-বাড়িসহ সম্পদ গড়েছে।

টাকা হারিয়ে সাতজন গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, মাসুদ রানা আটকের পর মধুমতি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাসুদ রানার স্ত্রী মোসা. মাহমুদা খাতুন পলাতক রয়েছেন। সেই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মধুমতির অর্থ, গাড়ি ও কলকারখানার মেশিন। এমডি আটকের পর সকল দায়-দায়িত্ব চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন এবং মাসুদ রানার ভাই ও মধুমতির ফ্যাক্টরি পরিচালক ফারুক হোসেনের নেওয়ার কথা থাকলেও তারা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত হয়েছে৷ এনিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ, আদালতে গ্রাহকরা কয়েকটি মামলা দায়ের করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এছাড়াও গত ৯ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন করে ইউএনও মহোদয়কে অভিযোগ দিলেও কোনো সমাধান পাইনি। আমানতের টাকা ফেরত পেতে তারা ভুক্তভোগী ৩৫ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রোকেয়া বেগম, দেলসাদ আলী, মজিবুর রহমান, পলাশ সাহা, শ্রী রমেশ চন্দ্র প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ নিয়ে কথা বলতে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানার ছোট ভাই ও মধুমতি গ্রুপের ফ্যাক্টরি পরিচালক ফারুক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, মধুমতি এনজিওর বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এ ঘটনায় শিবগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আবুল হায়াতকে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টটি হাতে পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট