রোজা শুরুর আগে থেকেই বাজারে প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর বাজারে নতুন করে আরও কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে রমজান মাসে ভালো নেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে ফলের বাজারেও। এবার রোজার মাসে ফলের দোকান থেকে খালি হাতে ফিরছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, দামের কারণে তারা খালি হাতে ফিরছেন। অন্যদিকে রমজানে যেসব বিক্রেতারা ভালো কেনা-বেচার আশা করেছিলেন,তারা এখন হতাশ।
ফলের খুচরা বাজারে তথ্য অনুযায়ী, রোজার শুরুতে ফলের দাম যে পরিমাণে বেড়েছিল তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। প্রতি কেজি আপেল ২৪০-৩৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। মাল্টা প্রতি কেজি ২২০-২৪০ টাকা, আঙ্গুর ২৫০-৩৫০ টাকা, আনার ৩০০-৪০০ টাকা, তরমুজ ৩০-৩৫ টাকা করে, পেঁপে ৯০-১০০ টাকা, পেয়ারা ৭০-৮০ টাকা করে আতাফল ৪৫০-৫০০ টাকা, ও কুল ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জাত ভেদে প্রতি হালি কলা ২০-৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকার ও মান ভেদে প্রতি খেজুর কেজি ৩০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরা ও সেগুনবাগিচা এলাকায় ফলের দোকানের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রমজানের বেচাকেনা নিয়ে হতাশ বিক্রেতারা বলেন, অন্যসব বছর রোজার মাসে তারা দিনে ১০ হাজার টাকার উপরে ফল বিক্রি করতেন। ফলের ব্যবসায় বিক্রি বেশি না হলে তাদের তেমন লাভ হয় না। এবার ক্রেতারা দোকানে আসছেন ঠিকই, কিন্তু দাম শোনে ফল না কিনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সারা দিনে অনেক বিক্রেতা ৩ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে রোজার মাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন তারা।
বিক্রেতারা আরও বলেন, তারা বুঝতে পারছেন দামের কারণে ফলের দোকান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা। কিন্তু চাইলেও তারা দাম কমাতে পারছেন না। এ কারণে রোজার মাসে ব্যবসায়ীক দিক দিয়ে তারা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
রাজধানীর রামপুরার ফলের দোকানি খায়রুল মিয়া বলেন, মানুষ আপেল, মাল্টা ও অন্যসব ফল হাতে নিয়ে দাম-দর করছে কিন্তু কিনছে না। এমন অবস্থা দোকানে আসা প্রতি ১০ জন ক্রেতার মধ্যে ২ জন ক্রেতা ফলে কিনছেন। তবে তাও পরিমাণে অল্প। সবসময় রোজার মাসে ভালো একটা বেচা-কেনার আশা থাকে, কিন্তু এবার খুব খারাপ।
রাজধানীর রামপুরা এলাকার ফল বিক্রেতা মো. মহসিন বলেন, রোজার শুরুতে ৩টি খেজুরের বক্স কিনেছি। প্রতি বক্সে ৫ কেজি করে খেজুর। কিন্তু আজ অষ্টম রোজার দিনে এসেও এক বক্স খেজুর বিক্রি শেষ হয়নি। আর অন্যসব ফলের কথা বাদই দিলাম। এছাড়া রোজার মাসে তরমুজের একটা ভালো চাহিদা থাকে প্রতি বছর। তরমুজের দাম ৫০ টাকা কেজি থেকে ৩০-৩৫ টাকাতে নেমে আসলেও ক্রেতা নেই।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন বাজারে অন্যসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এর মধ্যে ইফতার কিংবা সেহরিতে ফলের আইটেম রাখার কথা অনেকেই ভাবছেন না।
রাজধানীর রামপুরায় দোকানে ফল কিনতে আসা ক্রেতা মো. নরুল আমিন বলেন, ভেবেছিলাম আজ ইফতারের জন্য আনার নেব। কিন্তু প্রতি কেজির দাম ৩৫০-৪০০ টাকা। এতো দাম দিয়ে আনার কেনা সম্ভব হবে না। তাই দুই হালি চাম্পা কলা ৪০ টাকা দিয়ে কিনে বাসায় ফিরছি।
তিনি আরও বলেন, রোজার মাসে চাল, ডাল, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্য-পণ্য কিনতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় ফল খাওয়া এখন বিলাসিতা!
Leave a Reply