মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের এই মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গোদাগাড়ী উপজেলার বেদখল সরকারি খাস জমি উদ্ধারে তৎপর হয়ে ওঠে উপজেলা প্রশাসন। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ২৮৬ বিঘা সরকারি খাস জমির সন্ধান পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান। ওই জায়গায় নির্মিত হয়েছে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ১৩৩৬টি ঘর।
গোদাগাড়ী উপজেলার এসিল্যান্ড মো. সবুজ হাসান ও ইউএনও-এসিল্যান্ড’র সাহসি ভূমিকায় বিপুল পরিমাণ সরকারি খাস সম্পত্তি জবর দখলকারীদের হাত থেকে ভূমিহীনদের মাথা গোজার ঠাঁই-এ পরিণত হয়েছে। তবে এসব জমি উদ্ধার করতে গিয়ে এসিল্যান্ড-ইউএনও কে প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার হতে হয়েছে। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়েছে। তবুও প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানে আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান এঁর বিচক্ষন বুদ্ধিমত্তা ও সুদক্ষ নেতৃত্বে দখলমুক্ত করে তাতে ঘর তৈরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন-গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় এনেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’ এই মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল খাস জমি দখলমুক্ত করা। এই বাঁধা অতিক্রম করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসন সর্বদা তৎপর। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ সরকারকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, পদ্মা-মহানন্দা নদীবেষ্টিত গোদাগাড়ী উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন অবস্থায় ছিলেন, সেসব পরিবারের তালিকা তৈরি করে তাদের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নানামুখি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। দখলকৃত সরকারি খাস জমি উদ্ধারে বেগ পেতে হয়েছে। উদ্ধারের পরও ঘর নির্মাণের সময় এসেছে বাধা। একেক জায়গায় উদ্ধারকৃত জমির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল একেক রকম। কোনও কোনও জায়গায় বেশ কঠিন ছিল, আবার কোথাও বেশ সহজেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা-পাকা ঘরসহ দুই শতক জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হচ্ছে। গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রায় ১৩১৬ টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য বিপুল পরিমাণ জমির প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দিক-নির্দেশনায় প্রভাবশালী জবর দখলকারীদের হাত থেকে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি উদ্ধারের জন্য প্রায় দুইশত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান জানান, আমরা যখন এই জায়গা উদ্ধার করতে আসি, তখন আমাদের নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেহেতু সরকারি খাস জমি, তাই আমরা সব বাধা উপেক্ষা করেই উদ্ধার সম্পূর্ণ করি। দখল নেওয়ার পর আমরা লে-আউট করে এখানে ঘর তৈরির কাজ শুরু করি। এখন তা শেষ পর্যায়ে আছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় খাস জমি উদ্ধার করে ইতোমধ্যে ১১১২টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
Leave a Reply