জন্মের পরই বাবার মৃত্যু হয়। বাবার ভালোবাসা জোটেনি মেঘের নসিবে। মেঘের জীবনের বাবা-হারা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এখন ঢেকে গেল মা-হারা কালবৈশাখীতে। ১২ বছর বয়সে মেঘকে হারাতে হলো বাবা-মা দু’জনকেই।
মাসুমাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ছুটি গিয়েছিলেন নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের বাড়িতে। অশ্রুশিক্ত চোখে সবাই তার কর্মময় সময়গুলো স্মৃতিচারণ করেন।
জাহিদ হাসান সাব্বির বলেন, ‘মেঘ মায়ের জানাজায় ছিল। ছোট মানুষ এই বয়সে আর কত দুঃখ সহ্য করবে। জন্মের পরে বাবা মারা গেছে। বাবাকে দেখেনি। ১২ বছর বয়সে এবার মা মারা গেল। এখন নানা বাড়িতে থাকবে মেঘ। মেঘ রাজশাহীতে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ওই স্কুলে ওর মা (মাসুমা) ভর্তি করেছিল।’
কাঁদতে কাঁদতে মুর্ছা যাওয়া মাসুমার মা রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে চাকরি পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিল। মাসুমা বলতো-অনেক বড় চ্যানেলে চাকরি পাইছি আম্মু, তুমি চিন্তা কইরো না। সংসারে আর অভাব হবে না। মেঘকেও মানুষ করতে পারব। সন্তান রেখেই চলে গেল মেয়েটা। এখন মাসুমার সন্তানের কি হবে। কি নিয়ে থাকব আমরা।’
তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় গয়না পড়ে গিয়েছিল মাসুমা। দুর্ঘটনার পর তার গয়না হারিয়ে যায়। কিন্তু আমার মেয়ে বেঁচে থাকলে আমি তাকে আবার গয়না গড়িয়ে দিতাম।
প্রসঙ্গত, গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে স্বামীসহ বেড়াতে যাচ্ছিলেন মাসুমা। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নূরজাহান হোটেলের উল্টোদিকে বাস থেকে নেমে সিএনজি ঠিক করার সময় দ্রুতগামী একটি বাস তাদের ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সিএনজি অটোরিকশার চালক, মাসুমা আক্তার ও তার স্বামী গুরুতর আহত হন। প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসায় উন্নতি না হলে তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মাসুমা ইসলাম না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
Leave a Reply