যুগের বিবর্তণ, আকাশ সংস্কৃতি ও সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে এখন বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার সকল শ্রেণির মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ এর। কোন পার্বণেই কোথাও এখন দেখা মেলে না পুতুল নাচের। এক সময়ে গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার বা খোলা মাঠের প্যান্ডেলে বসতো পুতুল নাচের আসর।
অধির আগ্রহ নিয়ে আকর্ষণীয় এই পুতুল নাচ প্রদর্শণকারীরা জানিয়েছেন পৃষ্ঠপোষকতা তো নয়ই বরং; সরকারীভাবে অনুমতি না পাওয়ায় গ্রাম বাংলা থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে পুতুল নাচ। অর্থ কস্টে জীপন যাপন করা জীবন যাপন করা শিল্পীরা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে এই পেশার সাথে যুক্ত থাকা শিল্পরা। পৃষ্ঠপোষতা না করায় একদিন হয়তো প্রাম্যান্য চিত্রর মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মকে খুঁজে নিতে হবে এই পুতুল নাচ শিল্পকে।
পুতুল নাচ নিয়ে কথা হয় এই শিল্পর সাথে জড়িত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার একাধিক শিল্পীর সাথে। এই শিল্পের শিল্পী উপেন হালদার, আলম গাজসহ অন্যরা জানান, গত দুই থেকে তিন দশক আগেও গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার বা খোলা মাঠে মঞ্চ বানিয়ে দেখানো হতো পুতুল নাচ।
রঙ-বেরঙের হরেক পুতুল সাঁজিয়ে তার সাথে সুঁতা বেঁধে হাতের কারুকাজের মাধ্যমে বাদ্য-বাজনা ও গ্রামীণ নাচ-গানের সমন্বয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হতো একেকটি পলা।
‘রুপবান’, রাজকুমারী-রাজকুমার, পরীদের গল্প, ‘এক ফুল দুই মালি’, বেহুলা লক্ষিন্দর, ‘সাগরভাসা’র মতো বিভিন্ন পালা তুলে ধরা হতো দর্শকদের সামনে। দর্শকেরা পালা দেখতে টিকিট কেটে প্যান্ডেলে ভির করতেন। তবে এখন আর পুতুল নাচের সেই দৃশ্য চোখে পরে না কোথাও।
প্রযুক্তির অপব্যবহার, আকাশ সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতির নামে মুনাফা লোভী লোকজনের কারনে বিলুপ্ত হতে বসেছে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম পুতুল নাচ। সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি সংস্কৃতির নামে জুয়াড়ীদের হাত থেকে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন পুতুল নাচের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সংগঠন এর মালিক ও শিল্পীরা।
জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৫টি পুতুল নাচের দল ছিল। এর মধ্যে ‘দি তিশা পুতুল নাচ’, ‘দি গ্রাম-বাংলা পুতুল নাচ’, ‘দি থ্রি-স্টার অপেরা’, ‘মনফুল পুতুল নাচ’, ‘দি আল্পনা পুতুল নাচ’ অন্যতম।
“দি তিশা পুতুল নাচ” এর মালিক ননী সরকার জানান, ২০১১ সালে আমার পুতুল নাচের দলের লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুণরায় বরিশাল জেলা প্রশাসক অফিসে লাইসেন্স নবায়ন করতে গেলে লাইসেন্স নবায়ন হবে না বলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার পুতুল নাচের দলে শিল্পী কলা কুশলীসহ অন্তত ২৫ জন শিল্পী ছিল। প্রত্যেককে দিন শেষে বেতন প্রদান করতেন। আগে প্রতিদিন পুতুল নাচের শো দেখিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হলেও কিছু অসাধু লোকজন এই পুতুল নাচের নামে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন এবং প্যান্ডেলে জুয়ার আসর বসানোর কারনে এই পুতুল নাচ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আগে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেই আয়োজকদের ডাক পেতেন পুতুল নাচ দেখানোর জন্য তবে এখন আর কেউ পুতুল নাচের জন্য তাদের ডাকে না। ফলে ঘরে বসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার ৫ লাখ টাকার মূল্যের পুতুল ও নাচের বিভিন্ন সরঞ্জাম।
পুতুল নাচ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন জানিয়ে ঐহিত্যবাহী পুতুল নাচ প্রদর্শণে অনুমতি প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ঠদের কাছে দাবি জানান তিনি।
এ ব্যপারে ‘আগৈলঝাড়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, পুতুল নাচ শিল্পর সাথে জড়িত শিল্পীদের বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করবেন এবং অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে তাকে অনুরোধ করবেন। লাইসেন্স নবায়নের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করবেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply