1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

স্বাধীনতার গভীরতা ও ব্যাপ্তি আমরা কতটুকু জানি?

উপ-সম্পাদকীয়
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৫৪৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

উনিশ শতকে কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছিলেন—‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?’ আসলে প্রতিটি মানবজাতির নিকটই স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্বাধীনতার গভীরতা ও ব্যাপ্তি আসলে কেমন হইতে পারে—এই পৃথিবীতে তাহার সবচাইতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র রাতারাতি মুক্তমত ও বাক স্বাধীনতার অমরাবতী হইয়া উঠে নাই। ইহার ইতিহাস আমাদের ভিন্ন পাঠ দেয়।

মূলত ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা রক্ষার্থে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের সময় একদল ইংরেজ হল্যান্ডে আসিয়া বসবাস শুরু করেন। তাহাদের ভিতর হইতে একদল ইংরেজ ‘মে ফ্লাওয়ার’ নামক একটি জাহাজে আটলান্টিক পাড়ি দিয়া আমেরিকায় আসেন। তাহারাই ১৬২০ সালের নভেম্বর মাসে একটি স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক চুক্তি অনুযায়ী নূতন প্লিমথ নামক একটি গণতান্ত্রিক জনপদের পত্তন করেন। ইংল্যান্ড ছাড়াও ১৬৮০ পর্যন্ত হল্যান্ড, সুইডেন, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশ হইতে অল্প অল্প করিয়া অভিবাসীরা আমেরিকায় পা রাখেন। এমনভাবে ১৬৯০ সালের মধ্যে আমেরিকায় অনেকগুলি পৃথক উপনিবেশ স্থাপিত হয়। উন্নত ও স্বাধীন জীবনের জন্য ইউরোপ হইতে আমেরিকায় আসিবার স্রোত অব্যাহত থাকে। উপনিবেশকারীদের মধ্যে ইংরেজদের সংখ্যা বেশি ছিল বিধায় তাহারা ইংল্যান্ডেরই স্বাধীনতামূলক আইন প্রবর্তন করেন। এই জন্য আমরা দেখিতে পাই, ম্যাগনা কার্টা, হ্যাবিয়াস কর্পাস আইন, বিল অব রাইটস, ইংল্যান্ডের কমন ল প্রভৃতি আইন নূতন অভিবাসীরা আমেরিকার নিজ নিজ উপনিবেশে প্রবর্তন করেন। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদম শুরু হইতেই সকল ধরনের ব্যক্তিস্বাধীনতার ভিত্তিতে এই জনপদগুলি গঠিত হইতেছিল।

তবে সেই সময় কোনো উপনিবেশ তৈরি করিতে হইলে ব্রিটিশ রাজার নিকট হইতে সনদ লইতে হইত। ইংরেজ রাজার প্রতিনিধি হিসাবে গভর্নর নিযুক্ত থাকিতেন। ঘটনার ঘনঘটায় ১৭৬৩ সালে ইংরেজ-ফরাসি যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয় ঘটে বটে, কিন্তু ফরাসিদের সঙ্গে সাত বত্সরের যুদ্ধে ইংরেজ সরকারের বহু দেনা হইয়া যায়। এবং এই দেনা শোধের জন্য ইংল্যান্ড উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলি হইতে বেশি বেশি রাজস্ব আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমেরিকার উপনিবেশগুলির সংঘাত শুরু হয়। আমেরিকার বিক্ষোভ ও অসন্তোষকে সমুচিত জবাব দিতে সেই সময় ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জ ও প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আমরা দেখিতে পাই, ইংল্যান্ডের উচিত-শিক্ষা মোকাবিলা করিতে ১৭৭৪ সালে আমেরিকার সকল উপনিবেশের প্রতিনিধিরা একটি ‘কনটিনেন্টাল কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। এইভাবেই ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। আর এইভাবেই শুরুতে ১৩টি রাষ্ট্র লইয়া প্রথম কনফেডারেশন বা রাষ্ট্রসমষ্টির ভিত্তিপত্তন করা হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল—সাম্যনীতি, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, প্রাকৃতিক অধিকার, সামাজিক চুক্তি এবং অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিদ্রোহের অবিসংবাদী অধিকার দেয় এই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এইখানে বলা হয়—সকল মানুষ সমান, সৃষ্টিকর্তা সকলকে কিছু অবিচ্ছেদ্য অধিকার দিয়াছেন—ইহার মধ্যে রহিয়াছে জীবন, স্বাধীনতা ও সুখ অনুসন্ধানের অধিকার। এই অধিকারগুলিকে সুনিশ্চিত করিবার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা স্থাপিত হয়।

এইভাবেই যুক্তরাষ্ট্র একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং ইউরোপের অন্য রাষ্ট্রসমূহও পরবর্তী সময়ে ক্রমশ বাক স্বাধীনতা, মানবকল্যাণ ও মানবাধিকারকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কথা বলিবার অধিকার ছাড়াও ধর্ম, সংবাদপত্র ও সমাবেশের স্বাধীনতা এবং অভিযোগের প্রতিকারের অধিকার রহিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বক্তব্য হাজারো মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে সমান অধিকারের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করিতে অনুপ্রাণিত করিয়াছিল। এই সকল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন পাশ কবিরার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। একটি মানুষের জীবন, স্বাধীনতা ও সুখ অনুসন্ধানের অধিকার অর্জন যে এত সহজ নহে—তাহার গল্প নিহিত রহিয়াছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে যাহারা ‘স্বাধীনতা’র কথা ভাবিয়া আহ্লাদিত হয়—তাহাদের জানিতে হইবে—স্বাধীনতা আসলে কী জিনিস।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট