চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে ১৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। গত মাসের চেয়ে এটি ৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলো তারচেয়েও বেশি বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০২ শতাংশ। আর চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণ এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে।
জানা গেছে- খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ কারণে সরকার কৃষি ও এসএমই খাতের উৎপাদন বাড়াতে একের পর এক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করছে। ব্যাংকগুলোকেও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব কারণে ব্যাংকগুলোও এখন কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি খাতের বিনিয়োগ ঝুঁঁকিমুক্ত। এ খাতে বিতরণকৃত ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা কম। এ কারণে ব্যাংকগুলো এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিচ্ছে। খাদ্যপণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে খাদ্যসংকট আরো প্রকট হতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে কৃষিঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এসব কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে। আবার বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে আদায়ের পরিমাণও বাড়ছে।
তথ্য মতে- অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ৭০৩ কোটি বিতরণ করেছে, যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ।
একই সময়ে বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৯৬৭ কোটি বা লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ। গত ছয় মাসে কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি এই সময়ের মধ্যে বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ বিতরণ করেনি বিদেশিখাতের কমার্শিয়াল ব্যাংক অব শিলং ও উরি ব্যাংক লিমিটেড।
তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই ঋণ বিতরণে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, দ্বিতীয় মাসে (আগস্ট) ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা, তৃতীয় মাসে (সেপ্টেম্বর) ২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, চতুর্থ মাসে (অক্টোবর) ২ হজার ৮৮৫ কোটি টাকা, পঞ্চম মাসে (নভেম্বর) ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর সর্বশেষ ডিসেম্বরে ৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে।
সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে মোট ১৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ হয়েছিল ১৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। অর্থবছরের ব্যবধানে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শুধু ঋণ বিতরণ নয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষকরা মোট ১৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছেন। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকগুলোর আদায় হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
হিসাবে বলছে, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেড়েছে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
জানা গেছে- দেশে ব্যাংক খাতে কৃষিঋণের স্থিতি বা পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। বিপুল এ ঋণের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষিখাতে খেলাপি হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৮১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
কৃষিঋণের মধ্যে দুই ভাগে অর্থাৎ শস্য এবং নন-ফার্ম বা গবাদিপশু ও মৎস্য খামার খাতে ঋণ দেয়া হয়। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শস্যে ৭ হাজার ৯১৫ কোটি, পোল্ট্রিতে ৩ হাজার ৪৮৫ কোটি এবং মৎস খাতে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। একই সময়ে নন-ফার্মে ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
সূত্র: ভোরের কাগজ
Leave a Reply