পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে এ টিমে এসেছেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাহেদুর রহমান।
ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ জানান, দুই দেশের গোয়েন্দারা অতি গুরুত্বর সঙ্গে কাজ করছেন। ফলে খুব শীঘ্রই রহস্যের উন্মোচন হবে। তবে আমরা আশা করছি, পুরো লাশটা না পেলেও তার একটা অংশবিশেষ উদ্ধার করতে পারব। কারণ লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে না। এ কারণে আমাদের মূল কাজ হল দেহাংশ উদ্ধার করা। অন্যদিকে, আসামিদের জেরা করে অন্য কোনো অভিযুক্তের নাম উঠে আসে কি না- সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রয়েছে।
ডিবির টিম নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন পরিদর্শন করবে। এই আবাসনেরই একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হয়েছেন বলে কলকাতা পুলিশ বলছে। তাদের ধারণা, এমপি আনারকে হত্যার পর তার হাড়-মাংস আলাদা করে খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসামিদের ভাষ্য অনুসারে, মরদেহ যে খালে ফেলা হয়েছে, সেটিও পরিদর্শন করবে ডিবির টিম। পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্রেপ্তার আসামিদের জেরা করে উঠে আসা তথ্য কলকাতায় মিলিয়ে দেখবেন তারা। আলাপ-আলোচনা চলবে দুই বাংলার গোয়েন্দাদের মধ্যে। ২৬ ও ২৭ মে, দুদিনের সফরে জোর অনুসন্ধান চালাবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিশ্চিত যে, ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খালের এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই ফেলা হয়েছিল আনারের খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ। অন্তত চালকের লোকেশন তাই জানান দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার বনগাঁ অঞ্চল থেকে গ্রেপ্তার হয় হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত কসাই জিহাদকে। ওই রাতেই তাকে নিয়ে দেহাংশ উদ্ধারে চলে তল্লাশি। এরপর শুক্রবার আদালতের রায়ে পুলিশ জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েই দুপুরের পর থেকে ফের তল্লাশি চালাচ্ছে। দুদিনের তল্লাশিতেও কিছু মেলেনি।
১৪ মে রাতে দুষ্কৃতকারীরা মরদেহ খালে ফেলার জন্য যেই গাড়ি ব্যবহার করেছিল, সেই চালকের মোবাইল লোকেশন ওই খালের এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল বলে জানা যায়। দেহাংশ ফেলার পর গাড়ি সামনে না এগিয়ে ফের পেছনপথে ফিরে যায়।
নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে কৃষ্ণমাটি খালের দূরত্ব ৭-৮ কিলোমিটার মধ্যে। ফলে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত, দেহাংশ ওই খালের মধ্যেই আছে। কারণ নিউ টাউনে অতটুকু দূরত্বের মধ্যে খাল ছাড়া এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এ ধরনের কিছু ফেলা যেতে পারে। ফলে পুলিশ মনে করছে, দেহাংশ ওই খালের চারপাশেই আছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, সংশ্লিষ্ট গাড়িটি নির্দিষ্ট স্থানে থামিয়ে, দুষ্কৃতকারীরা যদি অন্য কোনো গাড়িতে ওঠে? তাহলে কী হবে? সেক্ষেত্রে লাশের সন্ধান একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছে তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা বলছেন, আনারকে হত্যার পর শরীর থেকে আলাদা করা মাংসের কিমার সমান টুকরো করা হয়েছিল। ১৪ মে যদি সেই দেহাংশ খালে ফেলা হয়, আজ অবধি ধরলে ১২ দিন। ফলে সেই মরদেহ বা দেহাংশ পাওয়া সম্ভব কি না, তা বড় প্রশ্ন।
একটি সূত্র বলছে, লাশ কিমার মতো টুকরো করার পর সিংহভাগ অংশ ফ্ল্যাটের দুটি টয়লেট কমোডে ফ্লাশ করে দেওয়া হয়েছে। অতি ছোট টুকরো করা হাড়, সেগুলিই প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
Leave a Reply