রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতলে ৩৭ বছর ধরে শূন্য পড়ে আছে ডোম পদটি। ১৯৮৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম নিশিপদ দাসের মৃত্যুর পর আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরপর থেকে ফাঁকা পড়ে আছে পদটি।
তবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম না থাকলেও থেমে নেই ময়নাতদন্তের কাজ। বর্তমানে ডোম নিশিপদ দাসের ছেলে শ্রী তপন দাস কাজ করেন ময়নাতদন্তের। যদিও শ্রী তপন দাস ডোম নন। তিনি রামেক হাসপাতালের ক্লিনার। ডোম না থাকায় তাকে দিয়ে ময়নাতদন্তের কাজগুলো করাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে (মর্গ) পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত প্রতিদিনের ঘটনা। দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, কিংবা হত্যার পর রাজশাহী জেলার মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত হয় এই লাশকাটা ঘরেই। বর্তমানে তপনের সঙ্গে কাজ করেন বিপন, রনি, সনি, হৃদয়, রঞ্জন, সুমন, মোহন, বাবর, সঞ্জয়। তারা ময়নাতদন্তের পরে সেলাই, মরদেহ দড়ি দিয়ে বাঁধা ও ভ্যানের ওপরে তোলা-নামার কাজগুলো করে থাকেন। তারাও কেউ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী নন।
তপন জানান, ১৯৯২ সালে হাসপাতালে ক্লিনার পদে যোগ দেন তিনি। যোগদানের দুই বছরের মাথায় মারা যান তার বড় ভাই অবিনাশ দাস। তার ভাই অবিনাশ বাবা নিশিপদের সঙ্গে ডোমের কাজ করতেন। দাদা ডিসি অফিসের অধীনে কাজ করতো। তাকেও বাবার মতো ২০ টাকা বেতন দেওয়া হতো। এই হাসপাতালে একমাত্র তার বাবার ডোম পদে চাকরি ছিল। তার মৃত্যু হয় ১৯৮৬ সালে। এরপর থেকে ৩৭ বছর শূন্য পড়ে আছে পদটি।
তপন বলেন, বর্তমানে আমি ছাড়াও ময়নাতদন্তের রুমে কাজ করছেন আরও ৮ থেকে ১০ জন। ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তারা সহযোগিতা করে থাকেন। যেমন- হাসপাতাল থেকে কাঁধে করে মরদেহ মর্গ পর্যন্ত নিয়ে আসতে চারজনের প্রয়োজন। যদিও মাঝে মধ্যে ভ্যান ব্যবহার হয়ে থাকে। তারপরেও ভ্যানে উঠানোর জন্যও চারজন লাগে। এছাড়া কাটা, সেলাই করা, মরদেহ উঠা-নামা করা, প্যাকেট করা ইত্যাদি কাজেও লোকবল লাগে। এসব কাজের জন্য চার থেকে পাঁচজন করে দরকার হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মরদেহের নমুনা সংগ্রহ। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো কেমিক্যালের বয়ামে রাখা হয়। ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় সংগ্রহ করা নমুনাগুলো। আগে এগুলো ঢাকায় পাঠানো হত। তখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে অনেক দেরি হত। এতে করে বিচার কাজ শুরু হতেও সময় লাগত। বর্তমানে ময়নাতদন্তের নমুনাগুলো রাজশাহী সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এগুলো গুরুত্বসহকারে সংগ্রহ করতে লোকবল লাগে। এসব কাজ একা সম্ভব না।
তপন ডোম আরও জানান, বর্তমান মর্গের পাশে একটি রুমে আগে ময়নাতদন্ত হত। এছাড়াও সার্কিট হাউসের পাশে নদীর ধারে একটি রুমে ময়নাতদন্ত হত। তখন সিভিল সার্জনের অধীনে ছিলো ময়নাতদন্তের বিষয়টি। তারপরে ময়নাতদন্তের রুম নিয়ে আসা হলো সদর হাসপাতালে। পরবর্তীতে এটি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পেসের ভেতরে স্থানান্তরিত হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মেডিকেল কলেজে কোনো ডোম পদ নেই। স্বাধীনতার আগের ২০ টাকা বেতনে ডোমের পদ ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পরে আর ডোম পদে নিয়োগ হয়নি। আমাদের অর্গানোগ্রামে নাই। আমরা গত ১০ বছর থেকে চেষ্টা করছি।
Leave a Reply