1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

হিজবুল্লাহর দেড় লাখ ক্ষেপণাস্ত্র-রকেটের নিশানায় ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১০৯ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ ১৮ দিনে গড়িয়েছে। হামলা-পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষে ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবিতে হামাসের শুরু করা এই যুদ্ধে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকাজুড়ে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ কোনও কিছুই ইসরায়েলের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন শিগগিরই হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের প্রতিবেশি লেবানন থেকে হিজবুল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলছে, গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং স্থল হামলার পরিকল্পনা বাতিল না করা হলে ইসরায়েলে নজিরবিহীন আক্রমণ চালাবে তারা। এমনকি ইসরায়েলের দিকে হিজবুল্লাহর দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র তাক করা আছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি।

এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস ইসরায়েলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাককে পাশে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে আছি, যেখানে হিজবুল্লাহর কাছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের চেয়েও অনেক বেশি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এরপর থেকে হিজবুল্লাহ আরও শক্তিশালী হয়েছে।

dhakapost
বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর কাছে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিপুল মজুত রয়েছে

 

ইরানের সহায়তায় ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নেতৃত্বাধীন সরকারকে সহায়তার মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং তা কাজে লাগিয়ে লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠী রকেটসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাম্প্রতিক এক হিসেব অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় দেড় লাখ রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে; যার বেশিরভাগই কয়েক ডজন কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে পারে। তবে লেবানন থেকে শত শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র তাদের কাছে আছে বলে একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষকরা ২০১৮ সালে ইসরায়েলের ঠিক উত্তরে লেবাননে অবস্থিত হিজবুল্লাহর প্রাণঘাতী অস্ত্রাগার নিয়ে একটি বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে তারা বলেন, বিশ্বে রাষ্ট্রীয় কাঠামো নেই এমন সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল্লাহই সবচেয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত। এই গোষ্ঠীটির কাছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান-বিধ্বংসী, ট্যাংক-বিধ্বংসী এবং জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এছাড়াও হিজবুল্লাহর কাছে বিপুলসংখ্যক ‘ডাম্ব’ রকেট রয়েছে।

স্ট্যান্ডঅফ ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা উৎক্ষেপণস্থল গোপন রেখে দূরবর্তী লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর কাছে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার স্বল্পপাল্লার রকেট, ইরানের তৈরি মাঝারিপাল্লার ৮০ হাজার ফজর-৩, ফজর-৫, খাইবার ও রা’আদ রকেট রয়েছে। এছাড়াও দূরপাল্লার ৩০ হাজার জিলজাল রকেট ও ফাতেহ-১১০ (এম৬০০) ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

dhakapost
ইসরায়েলের দিকে হিজবুল্লাহর দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র তাক করা আছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী সশস্ত্র এই গোষ্ঠী

 

নিবন্ধে আরও বলা হয়, সিরিয়ার কাছ থেকে সীমিতসংখ্যক স্কাড-ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে হিজবুল্লাহ। এছাড়া শতাধিক ফাতেহ-১১০ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তাদের কাছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ৫০০ কেজি ওজনের বোমা বহন করতে পারে। ফাতেহ-১১০ ক্ষেপণাস্ত্রে অত্যাধুনিক জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবস্থা রয়েছে; যার ফলে যেকোনও স্থানে নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে পারে।

ইসরায়েলের সামরিক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ধারণা, হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরুর প্রথম কয়েক দিনে ইসরায়েলে কয়েক হাজার রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। এছাড়াও প্রতিদিন দেড় হাজার করে রকেট ছোড়ার সক্ষমতা রয়েছে এই গোষ্ঠীর। ২০০৬ সালে দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের সময় রকেট দিনে প্রায় ২০০ রকেট ছুড়েছিল হিজবুল্লাহ। গত কয়েক বছরে হিজবুল্লাহ তাদের নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম এমন অস্ত্র মজুত প্রকল্প জোরদার করেছে।

হিজবুল্লাহর এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য নির্বিচার অস্ত্র মজুতের চেয়ে নির্ভুল নিশানার অস্ত্র বাড়ানো; যা শত্রুপক্ষকে লক্ষ্য করে কেবল হামলা চালানোই নয় বরং সরাসরি তাদের সদরদপ্তর, সামরিক ঘাঁটি, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সৈন্য সমাবেশ রয়েছে এমন এলাকায় আঘাত করা।

বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর কাছে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিপুল মজুত রয়েছে। এর মধ্যে হেলিকপ্টার ও নিচ দিয়ে যাওয়া বিমান বিধ্বংসী কাঁধ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। আর কাঁধ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের বিশেষত্ব হলো এই অস্ত্র নিক্ষেপকারীর অবস্থান গোপন রাখা যায়। নিক্ষেপকারী যেকোনও অবস্থানে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া হিজবুল্লাহর কাছে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ভারী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে আকাশে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সবচেয়ে গুরুতর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল হিজবুল্লাহর ট্যাংক-বিধ্বংসী ইউনিটের কাছে। হিজবুল্লাহর এই ইউনিট সেই সময় রাশিয়ার তৈরি উন্নতমানের কর্নেট ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। যে কারণে আইডিএফ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ওই সময়। আমেরিকান জ্যাভেলিনের মতো কর্নেট ক্ষেপণাস্ত্র ওপর থেকে ট্যাংকে আঘাত হানতে পারে।

ইসরায়েলের আলমা রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টারের অনুমান, হিজবুল্লাহর কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২ হাজার ড্রোন রয়েছে। এর মধ্যে বেসামরিক ড্রোনও আছে; যা অস্ত্র পরিবহনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

রাদওয়ান বাহিনী নামে হিজবুল্লাহর বিশেষ কমান্ডো ইউনিট রয়েছে। ইসরায়েলের সাথে এই বাহিনীর যুদ্ধ করার সক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয়। এমনকি দুই সপ্তাহ আগে হামাস যেভাবে হামলা চালিয়েছে, ঠিক একই ধাঁচের হামলা চালিয়ে সীমান্ত লাগোয়া ইসরায়েলের কিছু শহর ও গ্রামের নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে এই গোষ্ঠীটি। রাদওয়ান বাহিনীর প্রায় আড়াই হাজার সদস্য রয়েছে; যারা লেবানন এবং ইরানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এই বাহিনীর সদস্যরা প্যারাগ্লাইডিংয়ের মাধ্যমে এবং সমুদ্রপথ ব্যবহার করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশেও সক্ষম। এই বাহিনীর অনেক সদস্যের সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

২০১৮ সালে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে বেশ কিছু সুরঙ্গের সন্ধান পায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। হিজবুল্লাহর সদস্যরা যাতে বিনা বাধায় ইসরায়েলে প্রবেশ করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে এসব সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সুরঙ্গ ব্যবহার করে যে ইসরায়েলে হামলা চালানো সম্ভব তা গত ৭ অক্টোবর প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র: হারেৎজ।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট