বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খেজুরের রস। শীতকালে ভোরের আলো ফোটার আগেই গাছিরা খেজুর গাছের মাথায় উঠে রস সংগ্রহ করেন।
বর্তমানে বরগুনা পৌর বাজারে এক লিটার খেজুরের রসের দাম ৭০ টাকা। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত এর চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কম। মূলত খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং গাছিদের কমে যাওয়ার ফলে রস সংগ্রহ প্রক্রিয়া অনেকটাই হুমকির মুখে পড়েছে। খেজুরের রস হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।
খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া: ইটভাটা, বনভূমি ধ্বংস, ও কৃষি জমি বাড়ানোর কারণে খেজুর গাছ কাটতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
গাছিদের অভাব: পরিশ্রম ও দক্ষতার প্রয়োজন হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
পরিবেশগত সমস্যা: জলবায়ুর পরিবর্তন ও দূষণের ফলে রস সংগ্রহের উপযোগী গাছের সংখ্যা কমছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: অপরিষ্কার পাত্র ব্যবহার এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই খেজুরের রস পান করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
তবে এ ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া গেলে খেজুরের রস আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। নতুন খেজুর গাছ লাগানোর পাশাপাশি পুরোনো গাছ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। গাছিদের প্রশিক্ষণ ও রস সংগ্রহের আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও খেজুরের রস ও পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
খেজুরের রস বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও খাদ্য ঐতিহ্যের একটি অনন্য অংশ। এটি সংরক্ষণ করা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকেও জরুরি। যদি সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব।
বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, খেজুর গাছের রস গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্য। জলবায়ুর পরিবর্তন ও দূষণের ফলে রস সংগ্রহের উপযোগী গাছের সংখ্যা কমছে। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনো কাজ করিনি, তবে কাজ করা দরকার। দিন দিন এ শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। এ শিল্প পুনরুদ্ধারে সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা থাকবে।
Leave a Reply