দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস ঘটনা হলো হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। তবে এই মামলায় হাইকোর্টের রায় এখনও প্রকাশ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ উভয়ই এ মামলা আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের রায় প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, রায় প্রকাশের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, রায়ের অনুলিপি পেলে আসামিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারব কী যুক্তিতে বা কোন কোন যুক্তিতে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়টি পেলে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু এখনো রায় আমরা পাইনি।
এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।
রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিরা স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাগারেই থাকবেন।
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিমুল এহসান জুবায়ের বলেছিলেন, আদালত রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে দিয়েছেন। আর আসামিদের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
সাজা কমানোর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারিক আদালত যে ধারায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন, সেই ধারায় আসামিদের অপরাধ হয়নি। সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ এর ধারা ৬ এর (আ) তে অপরাধ করেছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ সাজাই যাবজ্জীবন। কিন্তু বিচারিক আদালত ভুল করে (অ) উপ-ধারায় সাজা দিয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগ রায়ে বলেছেন, বিচারিক আদালত ভুল ধারায় সাজা দিয়েছিলেন। এ কারণে উচ্চ আদালত সেই রায়ে হস্তক্ষেপ করে আমৃত্যু সাজা দিয়েছেন।
গত বছরের ১১ অক্টোবর আলোচিত এ মামলায় সাতজনের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষ হয়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।
এ ঘটনার মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান একজনকে খালাস দিয়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। সে অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এ হামলায় নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।
হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
এছাড়া বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য। তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
Leave a Reply