1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ কমলেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৭৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। কিন্তু আতঙ্ক পুরোপুরি না কাটায় এখনো মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।

 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা মো. হাছন (৭০)। তুমব্রু বাজার শাক-সবজি বেচেন তিনি। হাছান জানান, মিয়ানমারে সেদেশের বিদ্রোহীদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ চলছে। গত দুই দিন ধরে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত। কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটছে না। পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় বাজারে বেচাকেনা অর্ধেকের চেয়েও নিচে নেমে এসেছে।

তুমব্রু বাজারে ছোট্ট মুদি দোকান করেন বিশ্বনাথ ধর। তিনি বলেন, পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় পাঁচ দিন পর দোকান খুলেছি। কিন্তু বেচাকেনা নেই। বাজার একদম ফাঁকা, লোকজন নেই।

আতঙ্কের কারণে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ঘরে ফিরলেও, নারী-শিশুরা এখনো বাইরে অবস্থান করছে বলে জানান ব্যবসায়ী মো. হাশেম।

তিনি বলেন, ঘুমধুমের বেশির ভাগ ক্ষেত-খামার কাঁটাতারের বেড়ার পাশে। এখনো মানুষ সেখানে যেতে পারছে না। এছাড়া ক্ষেতে গেলে অনেকেই অবিস্ফোরিত গুলি, মর্টার শেল পাচ্ছে। যে কারণে আতংক আছে মানুষের মধ্যে।

এখনো কাজ-কর্ম করতে না পারায় সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান হাশেম।

স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলমান সংঘর্ষের কারণে গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে শুরু হয় অস্থিরতা। এখনো থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে এপারে। টানা ১০ দিন ধরে সীমান্তে অস্থিরতা ও গোলাগুলি চলছে। বর্তমানে কিছুটা কমলেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।

নিজেদের ক্ষেত-খামারে যেতে না পারা অধিকাংশ মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে বাড়ি না ফেরায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এদিকে তুমব্রু সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের কৃষি জমিতে মাঝে মাঝে পাওয়া যাচ্ছে মিয়ানমারের ছোঁড়া অবিস্ফোরিত গোলা। সেজন্য সীমান্ত সংলগ্ন কৃষি জমিতে না যেতে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানান ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ।

তিনি বলেন, মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মাইকিং করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার সীমান্ত শান্ত। কোনো ধরনের গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।

কিন্তু আতংক পুরোপুরি কেটে না যাওয়ায় এখনো জনজীবনে স্থবিরতা চলছে। মানুষ কাজে যেতে না পারায় কিছুটা অভাব দেখা দিয়েছে।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের সীমান্ত আপাতত শান্ত রয়েছে। দুই-তিনদিন ধরে মর্টার শেল কিংবা গোলাগুলির বড় ধরনের শব্দ আসেনি।

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর আহমদ আনোয়ারী জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের সীমান্তে গত সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মোটামুটি শান্ত ছিল। তবে আজ সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে থেমে থেমে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও ভারি অস্ত্রের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না।

অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে নাফ নদ পার হয়ে রোহিঙ্গারা কয়েকদিন ধরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ট্রলারে করে আসা রোহিঙ্গাকে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড পুশব্যাক অর্থাৎ ফেরত পাঠিয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদে টহলও বাড়ানো হয়েছে। এই নদের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকবাহী জাহাজসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত সোমবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা অস্বাভাবিক বলা যাবে না।

ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, সীমান্তে চলমান পরিস্থিতিতে কোনো রোহিঙ্গা বা সন্ত্রাসীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিজিবি ও কোস্ট গার্ড কাজ করছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে সীমান্ত চৌকি দখল নিয়ে তীব্র সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের আঁচ লাগছে বাংলাদেশেও। মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ির জলপাইতলীর এক বাড়িতে এসে পড়ে বাংলাদেশি এক নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন। গোলা ও মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের বাড়ি-ঘর ও ক্ষেতখামারে।

এর মধ্যে উখিয়া থানা পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তির মরদেহ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহ মিয়ানমারের কোনো গোষ্ঠীর সদস্যের হতে পারে।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের সেনা, বিজিপি ও সরকারি দপ্তরের ৩৩০ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে।

মিয়ানমারের এসব নাগরিককে স্বদেশে পাঠানোর জন্যে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এরই মধ্যে ৩২৬ জনের বায়োমেট্রিক শেষ করেছে। বাকি চারজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ পালিয়ে আসা ৩৩০ জন নাগরিককে ফেরত পাঠাতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে কাজ চলছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট