দক্ষিণাঞ্চলকে বলা হয় দেশের মৎস্য সম্পদের ভাণ্ডার। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুনার কয়েক হাজার জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এ পেশায় দিনদিন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ায় অনেকে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক জেলেই এখন বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন।
দেশের মোট চাহিদার ৪০ ভাগ মাছ আসে সাগর, নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে। জেলেরা এসব উৎস থেকেই মাছ শিকার করে সকলের সামুদ্রিক মাছের চাহিদা মেটায়। তারা পেশা পরিবর্তন করলে সামুদ্রিক মাছের ঘাটতি দেখা দেবে। তাই জেলেরা যাতে এই পেশায় থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতে পারে সেজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলে ফোরকান মিয়া বলেন, সব মালামালের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, বরফ সবকিছুই কিনতে হয় অধিক দামে। এভাবে জীবন চালানো কষ্টকর। মাছ ধরার সিজন থাকে ৫ মাস। এরমধ্যে আড়াই মাসই থাকে নিষেধাজ্ঞা। বাকি আড়াই মাসে ঝড়ঝাপটা-বৈরী আবহাওয়া থাকে। এখন শুধু জেলে পেশা দিয়ে সংসার চালানোর মত কোনো উপায় নাই। তাই অন্য পেশা খুঁজছি।
নলী এলাকার জেলে আনোয়ার বিশ্বাস বলেন, সাগরে ইলিশ তেমন পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে অনেক ইলিশ ওঠে। কিন্তু আগে সাগরের কিছু পয়েন্টে মাছ পাওয়া যেতই। এখন আর সেসব পয়েন্টও মাছ নেই। এই পেশায় এখন লাভের চেয়ে লোকসান বেশি। সাগর থেকে এসেও আমাদের অন্য কাজ খুঁজতে হয়, তারচেয়ে জেলে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়াই ভালো। অন্য পেশায় নিশ্চিত থাকা যায় যে দিনশেষে কিছু হলেও মজুরি পাব।
তালতলীর সোনাকাটা এলাকার জেলে শামীম মিয়া বলেন, আগে সাগরে যে মাছ পাওয়া যেত তা বিক্রি করে নিজেরাও খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতাম। বর্তমানে সাগরেই মাছের আকাল। আগে যে-সব পয়েন্টে মাছ পেতামই এখন সেসব জায়গাতে মাছ নেই। তারমধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানান প্রতিকূলতা তো আছেই। তাই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছি।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, দুর্যোগসহ মানবসৃষ্ট নানান কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে। এসব কারণে বিচরণ ও প্রজননের জায়গায় পরিবর্তন করছে নদী-সাগরের মাছ। গত কয়েক দশকে জেলেদের তুলনায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় সাগর ও নদ-নদীতে চাপ বেড়েছে। জেলেদের এ পেশার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতার লক্ষ্যে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বরগুনার ৬ উপজেলায় মোট ৪০ হাজার ২৭৭ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এসব জেলেদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় দরিদ্র ২৭ হাজারেরও বেশি জেলেকে ১ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৭৫৫ জনকে ছাগল বিতরণ করা হয়। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় জেলার ৫৬০ জন জেলেকে বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টির লক্ষ্যে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়।
Leave a Reply