সপ্তাহজুড়ে সবজির দামে অস্থির ছিল বাজার। ভরা মৌসুমে সবজির এমন চড়া দাম আগে কখনো দেখা যায়নি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ, ডাল, তেলের দামও বাড়তি। এরমধ্যে নতুন করে যুক্ত হলো সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি। কোনোরকম ঘোষণা ছাড়াই বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়। যা দুদিন আগেও ছিল ১৬৯ টাকা। একইভাবে দাম বেড়ে প্রতি দুই লিটার তেলের বোতল ৩৩৮ থেকে ৩৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
রামপুরা ভাই ভাই স্টোরের শরিফ উদ্দিন বলেন, হুট করেই কোম্পানিগুলো নতুন দামে তেল সরবরাহ শুরু করেছে। ভোক্তা পর্যায়ে যেমন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, একইভাবে বিক্রেতা পর্যায়েও তেলের মুনাফা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে ৫ লিটার তেল বিক্রিতে ২০ টাকা মুনাফা ছিল, সেটা এখন অর্ধেক হয়েছে। সেদিক থেকে হিসাব করলে কোম্পানিগুলো লিটারে তেলের দাম ৬ টাকা বাড়িয়েছে।
গত এক সপ্তাহ বাজারে সব ধরনের শাক-সবজির দাম আরও বেড়ে গেছে। শুধু পেঁপে আর শালগম ছাড়া ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো শাক-সবজি নেই বললেই চলে। অন্যান্য সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাজারে অস্থিতিশীল রয়েছে। যেখানে বছরের এসময়ে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়, সে আলুর কেজি এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি কয়েকগুণ বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
মালিবাগে শুভ নামের একজন বিক্রেতা বলেন, আলুর দাম কমছে না। তবে পেঁয়াজের দাম কমছে। এখন পেঁয়াজ ১০০ টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা।
অন্যদিকে বাজার ঘুরে কোথাও সবজির কোনো সরবরাহ সংকট চোখে পড়ছে না। বরং শীতকালীন সবজির ভরপুর সরবরাহ এখন। প্রতি বছরই এই সময়ে বাজারে সবজির সরবরাহ সবচেয়ে বেশি থাকে। সবজির পদেও থাকে নানা বৈচিত্র্য। এবারও পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সবজির দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব জাতের সবজি কেজিতে ২০ টাকার বেশি বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দুই সপ্তাহ আগে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এছাড়া উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন চাষিরা। ফলে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামেও সবজির দাম বেশি।
পাশাপাশি কয়েকজন ব্যবসায়ী এ-ও বলছেন, হরতাল-অবরোধে ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এছাড়া এবার আলুর দাম বেশি থাকায় অন্যান্য সবজির দামে এর প্রভাব পড়েছে। সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবও রয়েছে।
কারওয়ার বাজারে সবজি বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, সবকিছুর দামই বাড়তি, তাহলে কৃষক কেন সবজি কম দামে বিক্রি করবে। সেজন্য মোকামে সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কৃষকের আলুসহ বেশকিছু সবজি নষ্ট হয়েছে। আগে উত্তরবঙ্গ থেকে যে ট্রাক ১৬ হাজারে আসতো, সেটার ভাড়া এখন ২০ হাজার হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি সিম ও টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি মাঝারি সাইজের ফুলকপির দাম এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা অন্যান্য বছরের একই সময়ে ২০ থেকে ২৫ টাকায় থাকতো। এদিকে বাজারে গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এই পদের বেগুনের দাম ছিল ৬০ টাকা। লাউয়ের দাম চড়েছে বেশি। ছোট একটি লাউয়ের দাম পড়ছে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহে যা ছিল ৫০ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে বাজারে প্রতি আঁটি শাকের দামও ৩০ টাকার কমে মিলছে না। যদিও বাজারে প্রচুর পালং, মুলাসহ অন্যান্য মৌসুমি শাক রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, সবজির দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরাও উদ্বিগ্ন। অন্য কোনো বছর এসময়ে সবজির দাম এতো বেশি থাকে না।
তিনি বলেন, আসলে এ বছর বীজ, সারসহ অন্যান্য খরচ বাড়ায় সবজি উৎপাদনের খরচও অনেক বেড়েছে। যে কারণে কৃষকেরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
কারওয়ার বাজারের একজন ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, তরকারি কেনার মত অবস্থা নেই। সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। দেখার কেউ নেই। সংকটের কথা বলা হলেও দেখুন বাজারে কী নেই? আসলে সবকিছু ব্যবসায়ীদের মনমতো চলছে। সরকার দুর্বল।
Leave a Reply