গাজীপুরের শ্রীপুরে মা-ছেলে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার যুবক পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। শারীরিক সম্পর্কে বাধা দেয়ায় মায়ের বুকের ওপর বসে মা-ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ভারতে পালিয়ে যায় বলে জানান।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় শ্রীপুর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কালিয়াকৈর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন। এ সময় শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই আমজাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতার রহমত উল্ল্যাহ্ (২৯) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের কুষদী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
কালিয়াকৈর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন বলেন, নিজ বাড়ির পাশে পেশায় রং মিস্ত্রী রহমত উল্ল্যাহ্ ভাড়া থাকত। রুবিনার আধা পাকা বাড়িটি রং করার জন্য রং মিস্ত্রী রহমত উল্ল্যাহর কাছে যান রুবিনা। এতে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। রুবিনার বাসায় বিভিন্ন সময় লোকজন আসত, তা দেখে রহমত উল্ল্যাহ্ রুবিনার সাথে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। ঘটনার সাত দিন আগে রুবিনা রহমত উল্ল্যাহকে তলপেটে ব্যথা করার কথা জানিয়ে ওষুধ কিনে এনে দেয়ার জন্য বলে। ফার্মেসি থেকে সাতদিনের জন্য ওষুধ কিনে নিজে খাওয়ার কথা বলে দুটি ঘুমের ট্যাবলেট কিনে রুবিনার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসে রহমত উল্ল্যাহ্। ৩ জানুয়ারি দুপুর ১টায় রুবিনার বাড়ি গিয়ে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। ওই দিন রাত ৮টায় রহমত শারীরিক সম্পর্কের জন্য রুবিনার বাসায় গেলে অর্ধঅচেতন অবস্থায় রুবিনাকে খাটের ওপর শুয়ে থাকতে ও ছেলে জিহাদকে জেগে থাকতে দেখে। রাত ১০টার দিকে জিহাদ ঘুমিয়ে গেলে রুবিনার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয় রহমত উল্ল্যাহ্। এ সময় রুবিনা তাকে বাধা দেয়। পরে রুবিনার বুকের ওপর বসে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য ধস্তাধস্তি করতে থাকলে হঠাৎ তাদের হাতটি ঘুমিয়ে থাকা জিহাদের গায়ের ওপর গিয়ে পড়লে সে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে। জিহাদ যাতে চিৎকার করতে না পারে, তাই তিনি ডান হাত দিয়ে জিহাদের গলা তার বুকের সাথে চেপে ধরে এবং বাম হাত দিয়ে রুবিনার গলা চেপে ধরে, যাতে সেও চিকৎকার করতে না পারে। জিহাদ নিস্তেজ হয়ে গেলে মারা গেছে বলে বুঝতে পারে। এ সময় তিনি ভাবেন সকালে রুবিনা স্বাভাবিক হয়ে উঠলে ঘটনাটি সবাইকে বলে দিবে, সেই ভয়ে রুবিনার বুকের ওপর বসে গলা চেপে হত্যা করে রহমত উল্ল্যাহ্। এ সময় তার ঘরে থাকা দুটি স্মার্ট ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা দুই হাজার ৫০০ টাকা ও রুবিনার পায়ের নুপুর নিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান। ৭ জানুয়ারি ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি এলাকার মানুষদের সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমজাদ হোসেন জানান, মা-ছেলের লাশ উদ্ধারের পর কোনো ধরনের ক্লু খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। নিহত রুবিনার স্বামীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তাতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও হত্যার রহস্য জানতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় সোর্স নিয়োগ দেয়া হয়। তদন্তের একপর্যায়ে গোপালগঞ্জ থেকে রুবিনার মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে জানা যায় রহমত উল্ল্যাহ্ দালাল মাধ্যমে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশী তৎপরতার পর রহমত উল্ল্যাহ্ ভারত চলে যায়, পরে কৌশলে দুই দেশের দালালদের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করলে তাকে নিয়ে গাজীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এ উপস্থাপন করা হয়।
Leave a Reply