রাজধানীর ব্যস্ততম লেভেল ক্রসিং মগবাজার। এখানে কিছুক্ষণ পরপর ট্রেন যাওয়া আসা করে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই ক্রসিংয়ে লাইনের ওপর দিয়ে নিয়মিত ইউটার্ন করে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ নানা যানবাহন। ট্রেন আসার সময়ও ঝুঁকি নিয়ে ইউটার্ন করেন কেউ কেউ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই সময় সামনের অংশে যানজট ছিল। গাড়িগুলো সামনে গিয়ে বের হতে পারছিল না। আবার ট্রেনও আসছিল। দুর্ঘটনার ঝুঁকি দেখে বেশকিছু গাড়ি সরে পেছনে গেলেও একটি গাড়ি আটকে যায়। ট্রেনটি আরও কাছাকাছি চলে আসায় নেমে যান আটকে যাওয়া প্রাইভেটকারের যাত্রী ও চালক। পরক্ষণেই ট্রেনটি প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে সামনে নিয়ে যায়। সেইসঙ্গে আরেক পাশের লেনে থাকা মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় যদিও কেউ আহত হননি, তবে এটিকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এর কিছুক্ষণ পরে ওই ক্রসিংয়ের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুক্ষণ আগে এখানে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। একের পর এক গাড়ি এলোমেলোভাবে সেখানে ইউটার্ন করছে! কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই শতাধিক যানবাহনকে সেখানে ইউটার্ন করতে দেখা যায়। কখনো রিকশা, কখনো মোটরসাইকেল চলে যাচ্ছে উল্টো পথে। ব্যারিকেডও মানছে না কেউ কেউ। এভাবে প্রতি মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই ইউটার্ন বন্ধ করবে কে? ঢাকা মহানগর পুলিশ নাকি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ?
মগবাজার রেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, রেল লাইনের উপর দিয়ে ইউটার্নের নিয়ম নেই। রেল ক্রসিং ব্যারিয়ার যখন ফেলা হয়, তখনও অনেকে ওভারটেক করেন। ক্রসিং ব্যারিয়ারের নিচ দিয়ে, কখনো উপর দিয়ে পার হয়ে যান অনেকে। আবার ট্রেন আসছে দেখেও অনেকে তড়িঘড়ি করে পার হন, পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এসব কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, আজ যানজট দেখেও ব্যারিয়ার ডিঙিয়ে রেল ক্রসিংয়ের ওপরে উঠে পড়ে একটি প্রাইভেটকার। সেটিই প্রথমে ট্রেনের ধাক্কা খায়। আরও কিছু যানবাহন ছিল, যেগুলো সরে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু প্রাইভেটকারটি নড়তে পারেনি। চালক-যাত্রীরা বিপদ বুঝে নেমে যান বলে বেঁচে যান এই যাত্রায়।
আলী আকবর নামে একজন জানান, মগবাজার রেল ক্রসিং থেকে মগবাজার মোড়ে যাওয়ার আগে একটি ইউটার্ন ছিল, সেটি বন্ধ করেছে ট্রাফিক পুলিশ। মগবাজার মোড়ে যানজট হলে সেই যানজট রেল ক্রসিং ছাড়িয়ে এফডিসি-হাতিরঝিল মোড় পর্যন্ত চলে যায়। তখন বেশি ঝুঁকি তৈরি করে। তার ওপরে কিছু বেপরোয়া পরিবহন চালক ইউটার্ন করেন, যা সামনে পেছনে ডানে-বাঁয়ে চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে। এ অবস্থায় যখন ট্রেন আসে তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, এ রেল ক্রসিংয়ের দুই পাশে দুটি আলাদা গলি আছে। গলির ভেতর থেকে যানবাহন এসে উল্টো পথে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনও যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এর চাপ এসে পড়ে রেল ক্রসিংয়ের ওপরে। তার মধ্যে মগবাজার ও এফডিসি মোড়ে যানজট লাগলে বাড়তি চাপ পড়ে মগবাজার রেল ক্রসিংয়ে।
অনুমোদিত রেল ক্রসিংয়ের ওপরে যানবাহনের ইউটার্ন বন্ধ করবে কে– জানতে চাইলে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ দায়িত্ব রেলওয়ের। কিছুদিন আগে এটা নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা সরেজমিন করেছি রেল ক্রসিংগুলো। আমরা রেল ক্রসিংয়ের ওপরে যানবাহনের ইউটার্ন বন্ধে কারিগরি পদক্ষেপ নিতে বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই আজ একটি ঘটনা ঘটে গেল।
তিনি বলেন, এরপরও ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা বা পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না আমরা দেখব। রেল ক্রসিং পর্যন্ত যাতে যানজট না পৌঁছে সে ব্যবস্থা আমরা করব।
রেলওয়ে পুলিশের ঢাকার এসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, রেলওয়ে পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে থাকে। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থাপনা কিংবা রেল ক্রসিং এলাকায় যানজট বা অবৈধভাবে ইউটার্ন বন্ধ করার দায় আমাদের নয়।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
Leave a Reply