আকারে বড়, রসালো, সুমিষ্ট ও গাঢ় লাল রঙের বৈশিষ্ট্যের কারণে কিশোরগঞ্জের মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এবার লিচুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ফলন বিপর্যয়ে অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে এই লিচু। তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার কারণে বেশিরভাগ বাগানের লিচুর গুটি রোদে পুড়ে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে ধারণ করেছে কালো রঙ।
প্রায় দুইশ’ বছর ধরে লিচু চাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়ায়। এই গ্রামে প্রতিটি বাড়িতেই লিচুর আবাদ হওয়ায় এর নামকরণ হয় ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’। গ্রামের প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে ১০/১২টি বা তার চেয়েও বেশি লিচু গাছ।
গাজীপুর থেকে লিচু কিনতে এসেছেন মাসুদ মিয়া। তিনি বলেন, লিচু অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। আমি বাগান ঘুরে ঘুরে দেখেছি। অন্য সময়ের তুলনায় লিচুর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এখানকার লিচুর সুনাম রয়েছে খেতে অনেক সুস্বাদু। এবার অন্যবারের তুলনায় গাছে লিচু নাই তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিশোরগঞ্জ থেকে লিচু কিনতে এসে ব্যবসায়ী মামুন হাসান বলেন, এই গ্রামের লিচুর অনেক সুনাম রয়েছে তবে দামটা বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে।
হবিগঞ্জ থেকে লিচু কিনতে এসেছেন সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, এই গ্রামের লিচুর নাম শুনে আমি এখানে এসেছি। এই লিচুর অনেক সুনাম রয়েছে। দেখতে সুন্দর লাল রংয়ের টসে টসে। তবে বেশি দামে বিক্রি করছে। পার পিস ১০ টাকা করে ১০০ লিচু ১০০০ টাকা করে বিক্রি করছেন তারা।
স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী তৌহিদ হাসান বলেন, আমি কতবছর যাবৎ এই ব্যবসা করি। অনেক আগে যখন লিচু গরু গাড়ি দিয়ে কিশোরগঞ্জ নিতাম তখন থেকেই লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই বছর যে দুর্যোগ আসছে এটা আমার জীবনে প্রথম। শুরুতে যখন লিচু বাগানে মুকুল আসছে তখন এসেছে বৃষ্টি এরপর খরায় আরও লিচু নষ্ট হল। লিচু যখন গুটি হচ্ছে ঠিক তখনই প্রচণ্ড রৌদ্রে নষ্ট হয়েছে।
সাধারণত মঙ্গলবাড়িয়া লিচু ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। পাশাপাশি সিংগাপুর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও মঙ্গলবাড়িয়া লিচু রপ্তানি করা হয়।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই আলম বলেন, পাকুন্দিয়ার ঐতিহ্য হচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার লিচু গাছ আছে। মঙ্গলবাড়িয়া, নারান্দী, হোসেন্দী সামগ্রিকভাবে এলাকাগুলো মঙ্গলবাড়িয়া লিচু হিসেবে পরিচিত। শুধুমাত্র কিশোরগঞ্জ নয় কিশোরগঞ্জের বাইরে সারা বাংলাদেশে এই লিচুর খ্যাতি রয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে অতি খরার কারণে লিচুর ফলনে বিপর্যয় হয়েছে। প্রতি বছর এ গ্রাম থেকে ৫-৭ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। তবে এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে লিচুর ফলন একেবারেই কম। গতবারের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ ফলন হয়েছে।
Leave a Reply