একটু বৃষ্টি হলেই মাটি দিয়ে তৈরি কাঁচা রাস্তাটি কাদায় ভরে যায়। প্রায় দশ গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে গিয়ে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির দুই কিলোমিটার অংশজুড়ে এমন করুণ অবস্থা হলেও রাস্তাটি পাকাকরণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। তাই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে ও প্রতিবাদ হিসেবে এক ভিন্নধর্মী পন্থা অবলম্বন করেছেন গ্রামবাসীরা। চলাচলের ওই রাস্তাটিতে গ্রামবাসী ও পথচারীরা ধানের চারা রোপণ করেছেন।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরের পর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আব্দুল বেপারি কান্দি গ্রামের কাঁচা রাস্তায় এই ধান রোপণ করা হয়।
স্থানীয় ও পথচারীরা জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর অতিক্রম করলেও তাদের রাস্তার উন্নয়নে কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বার বার বলা হয়েছে। তারা যেন আব্দুল বেপারি কান্দি গ্রামের রাস্তাটি চোখেই দেখেন না। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা পেরিয়ে চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষকে। রাস্তাটির কারণে এলাকার অসুস্থ বৃদ্ধ, গর্ভবতী মায়েদের শহরে নেওয়া যায় না চিকিৎসার জন্য। স্থানীয় দুইটি স্কুলে হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। রাস্তাটির কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে চায় না। রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ হওয়ায় কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করা যায় না। এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের বছরের প্রায় ৫-৬ মাস ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেন্টু মিয়া বলেন, রাস্তাটি দিয়ে দশটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। সবার খুবই সমস্যা হয়। এলাকার যত কৃষি পণ্য উৎপাদন হয় সবগুলোই মাথায় করে বা বিকল্প কোনো পন্থায় নিয়ে যেতে হয় কাজির হাট বাজারে। পাশাপাশি এখানে দুর্গারহাট নামে একটি বাজার আছে এই বাজারের যত মালামাল সবগুলোই বেশি দামে কিনতে হয় গ্রামবাসীকে। বড় কান্দি মডেল একাডেমী ও ৭ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, এসব শিক্ষার্থীরাও এই কাঁদামাখা রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করে। অনেকের পোশাক নষ্ট হয়ে যায়, জুতা ছিড়ে যায়, কাঁদা মাটিতে বই খাতাও নষ্ট হয়। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি চলাচলের উপযুক্ত করার জোর দাবি জানাই আমি।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল মাঝি ও রবিউল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির দিনে স্যান্ডেল হাতে নিয়েই দুই কিলোমিটার রাস্তা কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারে না কৃষকরা। চেয়ারম্যান-মেম্বার আসে যায় কিন্তু রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয় না। ভোটের সময় তারা আশ্বাস দেয়, পরে তারা ভুলে যায়।
বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কামাল মৃধা বলেন, রাস্তাটির অবস্থা যে এত খারাপ তা আমি জানতাম না। ধানের চারা রোপণে বিষয়টি কেউ আমাকে বলেনি। উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ এলে প্রয়োজনীয় স্থানে উন্নয়ন করা হয়। রাস্তাটির অবস্থা খারাপ হলে রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেব আমরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জাজিরা উপজেলার প্রকৌশলী ইমন মোল্লা বলেন, ৯৮ লাখ টাকার প্রাক্কলন বাজেট তৈরি করে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply