রাজশাহীতে মঙ্গলবার সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করলেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির সুলতানা আহমেদ সাগরিকা। তিনি জোন-৭ ( ১৯, ২০ ও ২১) আসনে লড়বেন। ফরম উত্তোলনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দিনের আলো হিজড়া সংঘের উপদেষ্টা শরীফ সুমন, বিভাগীয় হিজড়া গুরু রিনা খান, দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা ও কোষাধ্যক্ষ জুলি।
ফরম উত্তোলন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সাগরিকা বলেন, তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় নবম শ্রেণিতে ওঠার পরে আর স্কুলে টিকতে পারেন নি। সহপাঠীদের নানা টিপ্পনির কারণে তিনি স্কুল ছাড়েন। শুধু তাই নয় সমাজের ও পারিপার্শ্বিক জনগণের লাগাতার অত্যাচার ও তার পরিবারকে প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করায় এক সময় তাকে নিজ বাড়ি ও বাবা-মাকে ছাড়তে হয়েছে। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। তার রয়েছে নানা তিক্ততা ও অভিজ্ঞতা।
তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানেরা অন্য গ্রহের মানুষ নয়। তারা এই পরিবার, সমাজ তথা দেশের মানুষ। তারাও কোন কোন বাবা-মায়ের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এসেছেন। তারাও মানুষ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এক শ্রেণির মানুষ তাদের মানুষ হিসেবে মানতে চায় না। অথচ সরকার তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের এই স্বীকৃতি ও ভোটার হওয়ার কারনে তিনি আজ অন্যান্যদের সাথে নির্বা চনে অংশগ্রহন করনতে পারছেন বলে তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
সমাজের সকল বাধা অতিক্রম করেন তিনি এখন জনগণের সেবা করতে চান। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও যে সকলের ন্যায় মানুষকে ভালবাসতে পারে এবং জনগণের সেবা করতে পাওে তা তিনি দেখানোর জন্যই সমাজ সেবায় আসতে চাচ্ছেন। আর এই সুযোগটা করে দেয়ার জন্য অত্র ওয়ার্ডবাসীর নিকট দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন সাগরিকা।
তিনি আরো বলেন, মূলত একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য কাজ করছেন। যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি জনসাধারণের ও তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারবেন। মাঠপর্যায়ে প্রতিদিনই মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন নানা বিষয়ে। মানুষ ভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব চায়। হিজড়াদের যোগাযোগ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। নারী কাউন্সিলররা রাত-বিরাতে চলতে পারেন না। পুরুষেরাও নারীদের নিয়ে কাজ করতে দ্বিধা-দেেন্দ ভোগেন। কিন্তু হিজড়াদের বেড়ে ওঠাটাই অন্যদের থেকে আলাদা। তাঁরা যেকোনো সময় মানুষের বিপদ-আপদে দাঁড়াতে পারেন।
ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে সাগরিকা বলেন, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নানা কথা ছড়াচ্ছেন। তারা বলছেন যে, হিজড়া জনপ্রতিনিধি হলে অত্যাচার বেড়ে যাবে। হিজড়াদের সম্পর্কে আগে যে ধ্যানধারণা ছিল, তা সামনে আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে জনগণ তাঁদেরও ভালোবাসতে শিখে গেছে। অনেক জায়গায় তাঁদের সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিরা ভালো করছেন। তিনিও সব বাধা অতিক্রম করে ভাল কাজ করবেন। আর এই সুযোগটা কওে দেবেন অত্র ওয়ার্ড সমুহের ভোটারগণ।
সাগরিকার বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহমখদুম থানাধীন শিল্পীপাড়া এলাকায়। বাবা-মায়ের চার সন্তানের একজন তিনি। বাবা মারা গেছেন। বর্তমানে মা-বোনের কাছে থাকেন। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে যান। মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
Leave a Reply