রাজশাহীতে চোর সন্দেহে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শ্বশুর, শ্যালক ও ফ্যাক্টরি ম্যানেজারসহ বাড়ির মালিককে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) মহানগরীর সপুরায় থাকা বিসিক শিল্প নগরীর বিশাল বিস্কুট ফ্যাক্টরির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই নির্মাণ শ্রমিকের মধ্যে একজনের নাম রাজু ওরফে রাকিব (৪২) ও অন্যজন রেজাউল করিম ওরফে আতাউর (৪৫)।
রাজুর বাড়ি তেরখাদিয়ার ডাবতলা এলাকায়। আর রেজাউলের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সুখনিয়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি রাজপাড়া থানার তেরোখাদিয়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, একটি খাদ্য পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির মালিকের বাড়িতে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহানগরীর বিসিক শিল্প এলাকার মডার্ণ ফুড নামের কোম্পানির মালিকের বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটে। গোপন খবরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার দুই নির্মাণ শ্রমিককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে জরুরি বিভগের চিকিৎসক রেজাউলকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আপর শ্রমিক রাজুকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কয়েক মিনিট পর তারও মৃত্যু হয়।
এদিন রাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপ-কমিশনার আরিফিন জুয়েল জানান, ঘটনার পর ওই বাড়ির মালিকসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সপুরা বিসিক মডার্ন ফুড ফ্যাক্টরির মালিক আব্দুল মালেক হাজীর ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর কারখানা সংলগ্ন বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক। বৃহস্পতিবার দুপুরে চার লাখ টাকা চুরির অভিযোগে ওই দুই শ্রমিককে খুঁটিতে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করা হয়। চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত দুই শ্রমিকের ওপর নৃশংস কায়দায় নির্যাতন চলে। তাদের হাত-পায়ের নখ পর্যন্ত তুলে ফেলা হয়। লোমহর্ষক এমন নির্যাতনের পর তাদের অবস্থার ক্রমেই অবনতি হয়।
তিনি আরও বলেন, রাতেই ফ্যাক্টরি সংলগ্ন মালিকের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় দুই শ্রমিককে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেয়ে পিকআপভ্যানে তুলে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এ সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেজাউলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অপর শ্রমিক রাজুকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু ওয়ার্ডে নেওয়ার কয়েক মিনিট পর তারও মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে দুই শ্রমিককে উদ্ধারের সময় কারখানা মালিক মো. আব্দুল্লাহ (৩৮), তার শ্বশুর মো. মাসুম রেজা (৫০), বাড়ি মালিকের চাচাতো শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন রিয়াল (১৯) ও ফ্যাক্টরি ম্যানেজার মো. ইমরানকে (২১) আটক করেছে পুলিশ। তাদের বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে নিহত দুই নির্মাণ শ্রমিকের পরিবারকে বৃহস্পতিবার রাতেই খবর দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে বলেও জানান- ঊর্ধ্বতন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
Leave a Reply