মানুষ মাত্রই ভুল করে এটা স্বাভাবিক। মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানবিক দুর্বলতার জন্য মানুষ পাপে লিপ্ত হয়। শয়তান ও প্রবৃত্তি তাকে পাপের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। আর আল্লাহ বান্দার প্রতি দয়াশীল হয়ে এমন কিছু উপায় বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে সে পাপ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার প্রতি বিভিন্ন সময় তার ক্ষমার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন। বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানে অগনিত মানুষকে ক্ষমা করেন । রমজানের রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়। রোজার সঙ্গে গুনাহ মাফের সম্পর্ক খুব গভীর। রমজান মাসে মাগফিরাতের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দেয় বান্দার সব পাপ।
গুনাহ মাফের বিশেষ তিনটি আমল
মাহে রমজান মাগফিরাতের মৌসুম।
রমজান মাসের বিশেষ তিনটি আমল গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম : (১) ফরজ সিয়াম (রোজা) মহান আল্লাহ যা শুধু রমজান মাসেই মুসলিম জাতিকে দান করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমযানের সিয়াম রাখে, তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস নং ৩৫)
(২) ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে তারাবির নামাজ আদায় করবে । তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যাবে। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৭)
(৩) লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা রমজান মাস ব্যতীত বছরের আর কোন মাসে পাওয়া যায় না। এ রাত্রি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। ওই রাত্রিতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাজিল করা হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদরে ক্বিয়ামুল লাইল করবে ঈমান ও এহতেছাবের সঙ্গে, আল্লাহ পাক তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। (বুখারি, হাদিস নং: ২০১৪)
মাহে রমজানে গুনাহ মাফের সময়
পবিত্র রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে বান্দার দোয়া কবুল হয় । যেমন ইফতারের আগ মুহূর্ত। এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৭৫২)
রমজান পেয়েও যারা হতভাগা:
রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস । পক্ষান্তরে যারা এ মাস পেয়েও গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে চড়লেন। প্রথম ধাপে চড়েই বললেন, ’আমীন।’ অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে চড়ে বললেন, ’আমীন’, অনুরূপ তৃতীয় ধাপেও চড়ে বললেন, ’আমীন।’
অতঃপর তিনি (এর রহস্য ব্যক্ত করে) বললেন, ’আমার নিকট জিবরীল উপস্থিত হয়ে বললেন, ’হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রমজান পেল অথচ পাপমুক্ত হতে পারল না আল্লাহ তাকে দূর করেন।’ তখন আমি (প্রথম) ’আমীন’ বললাম। তিনি আবার বললেন, ’যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে জীবিতাবস্থায় পেল অথচ তাকে দোজখে যেতে হবে, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (দ্বিতীয়) ’আমীন’ বললাম।
অতঃপর তিনি বললেন, ’যার নিকট আপনার (নাম) উল্লেখ করা হয় অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (তৃতীয়) ’আমীন’ বললাম। (ইবনে হিব্বান, হাদিস নং -৪০৯, ৯০৭, সহিহ তারগীব ৯৮২)
তাই চির শত্রু শয়তানের ধোকায় না পড়ে আমাদের উচিত রমজানে হতভাগা না হয়ে খাঁটি তাওবা করে নিজের গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নেওয়া ।
আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন, আমীন!
লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।
Leave a Reply