নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন—
অভিযোগ গঠন বাতিল করতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানিতে যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে প্রথম যুক্তি ছিল— একই সূত্র থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুটি মামলা উদ্ভব হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মামলা হাইকোর্ট বাতিল করেছেন কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলাটি চলমান রয়েছে। তাদের এই ইস্যু অনেক আগেই আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টে সেটেলড হয়ে গেছে। তাই তাদের এ যুক্তি নতুন করে বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আরেকটি যুক্তি হলো—মিগ-২৯ মামলা। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর প্রদান করা এ মামলার অপ্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে, অভিযোগ গঠনের সময় আসামিকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং জিজ্ঞাসা করতে হবে। যা সিআরপিসির ২৪২ ধারায় বলা আছে। এই যুক্তি অত্র মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এই উপমহাদেশের ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধারা ২০৫, ৫৪০ (এ) এর ওপর অসংখ্য রায় বিদ্যমান রয়েছে। এ মামলায় খালেদা জিয়ার আবেদনে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। যা আসামির অধিকার নয়। বরং আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা। আদালতই বিবেচনা করবে কখন কাকে হাজির করতে হবে।
এই মামলায় আসামি যেহেতু দরখাস্তের মাধ্যমে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন, সেহেতু আসামির (খালেদা জিয়া) একইসঙ্গে উভয় সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি (আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার) তার পক্ষে বলেছেন, ‘আমি নির্দোষ’। তাই চার্জ গঠনের সময় আদালতে খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়নি—এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করা হলো।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যক্ষেণ দিয়েছেন।
এর আগে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে খালেদার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাছান চৌধুরী। এসময় আদালত কক্ষে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
দীর্ঘদিন পর এ বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন—তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
Leave a Reply