প্রযুক্তি-নির্ভর আধুনিক গণমাধ্যমে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের দায়িত্ব-কর্তব্য এখন নতুনভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রতিদিনের কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। পাশাপাশি নিউজরুমের কাঠামো, নিউজ কনটেন্ট, সাংবাদিক-পাঠক ও সোর্সের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্কেরও পরিবর্তন ঘটেছে।
আধুনিক সাংবাদিকতার এই যুগে একজন সাংবাদিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য বিবিধ কনটেন্ট সরবারহ নিশ্চিত করে পাঠকের সঙ্গে এক ধরনের ইন্টারঅ্যাকটিভ যোগাযোগ প্রক্রিয়ার চর্চা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কারণ ইন্টারনেটের সুবাদে খবর ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পাঠকের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে; তারা ২৪ ঘণ্টাই খবর পাচ্ছেন।
যত বেশি সংবাদমাধ্যমে এই ইন্টারঅ্যাকটিভ যোগাযোগের উপস্থিতি আমরা রাখতে পারবো, সংবাদমাধ্যম হিসেবে খবরের কনটেন্ট নিয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাওয়া তত সহজ হবে। আর গণমাধ্যমের এই কাজে মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।
মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আজ এমন একটি সুযোগ তৈরি করেছে যা সাংবাদিকদের প্রতিবেদন তৈরি ও অনেক পাঠক-দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে সহায়তা করছে। পাঠক-দর্শকদের সঙ্গে যে প্রক্রিয়ায় বা প্ল্যাটফর্মে আমাদের এখন যোগাযোগ হচ্ছে ৯০ দশকের শেষের দিকেও এমনটা ছিল না। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্মার্টফোন প্রযুক্তি উভয়ের উৎকর্ষতা ঘটেছে তার পরেই।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গোটা সাংবাদিকতা চর্চায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মূলধারার সাংবাদিকতায় একজন সাংবাদিক সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ সংগ্রহ করেন, ইন্টারভিউ নেন। মূলত মাঠ পর্যায়ের সোর্সের ওপর নির্ভর করেই সাংবাদিককে তথ্য সংগ্রহের কাজটি করতে হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নাগরিক সাংবাদিকতার কারণে সোর্স নিজেই সংবাদের তথ্য, ছবি বা ভিডিও সরাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করছে বা ইমেইলে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠাচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রথাগত গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিকরা এখন খবর তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রচারের কাজে স্মার্টফোনের উপরেই বেশি নির্ভর করছেন।
ঢাকার বাইরের মফস্বল জনপদে সাংবাদিকতার কাজে স্মার্টফোনের ব্যবহার অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা যায়। কয়েক বছর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ করাতে গিয়ে বিষয়টা ভালোভাবেই চোখে পড়েছে।
আমাদের দেশে অনেক সাংবাদিক তৈরি হয়েছেন যারা কি না সাংবাদিকতার মূল কাজগুলো (সংবাদ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও পাঠানোর কাজ) পুরোপুরি মোবাইল ফোন দিয়ে সেরে ফেলতে পারছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইল ডিভাইস—এই দুটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এমন দুটি উদ্ভাবন যা কি না গোটা সাংবাদিকতার গতি-প্রকৃতি অনেকাংশে পাল্টে দিয়েছে। মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলতে পারি। যদি আমরা আইফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শুরুর দিকের কথা বলি তাহলে প্রথম আইফোন এসেছিল ২০০৭ সালে এবং টুইটার ২০০৬ সালে। তাই বলাই যায় যে অনেক অল্প সময়ের মধ্যেই সাংবাদিকতায় এই উভয় প্রযুক্তি প্রভাব বিস্তার করেছে।
মোবাইল ফোনের উন্নত ক্যামেরা এখন ক্যানন বা নিকনের মতো কোম্পানির রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে অতীতে আর কোনো প্রযুক্তি যোগাযোগ খাতে এতটা পরিবর্তন আনতে পারেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ব্যবহারকারীরাই সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক অর্থাৎ ভিজিটর বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। সুতরাং সাংবাদিকদের উচিত হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবশ্যই পাঠক-দর্শকদের ধরে রাখার জন্য কনটেন্ট তৈরিতে উদ্যোগী হওয়া।
এছাড়া সংবাদমাধ্যমের জানতে হবে কোথায় পাঠক-দর্শক বেশি সময় ব্যয় করছেন এবং সেই অনুযায়ী প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল তৈরি করতে হবে। এর পাশাপাশি জানতে হবে প্রচারিত সংবাদের সঙ্গে পাঠকের মোবাইল ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যকলাপ কীভাবে ঘটছে।
এই দুইটি বিষয়ের উত্তর থেকেই মূলত আমরা জানতে পারবো সাংবাদিকতার পরিবর্তন কীভাবে এবং কোথায় ঘটছে যার উপর নির্ভর করে সংবাদমাধ্যম ঠিক করবে কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে এবং কোথায় তা প্রচার করতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে ডিজিটাল ফাস্ট স্ট্র্যাটেজি বা সবার আগে ডিজিটাল কৌশল প্রয়োগ করা এই ধারণা এখন প্রায়ই শোনা যায়। মূলত ধারণার গোড়াপত্তন হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর যুক্তরাজ্যের ফাইন্যানশিয়াল টাইমস পত্রিকার সম্পাদক লিওনেল বারবার (Lionel Barber) পত্রিকার কৌশলগত পরিকল্পনায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসার ঘোষণা দেন।
প্রিন্ট পত্রিকা থেকে সবার আগে ডিজিটাল কৌশল তিনি গণমাধ্যমের জন্য আমূল পরিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে সংবাদ পরিবেশনের কাজে অগ্রাধিকার দিতে চাই এবং ছাপা কাগজ থাকবে দ্বিতীয় স্থানে। ফাইন্যানশিয়াল টাইমস টিকে থাকবে যদি ডিজিটাল ও প্রিন্ট এই উভয় মাধ্যমই পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
সনাতনী গণমাধ্যম যেমন প্রিন্ট, রেডিও এবং টেলিভিশন কাজ করে প্ল্যাটফর্ম নির্ভর মিডিয়া হিসেবে অর্থাৎ এই গণমাধ্যমগুলো এখনো কনটেন্ট প্রচারের কাজে নিজেদের প্রধান বা মূল প্ল্যাটফর্মকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল সাংবাদিকতার অন্যতম পথপ্রদর্শক জন মুলিন (John Mullin) সবার আগে ডিজিটাল কৌশলকে সব ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারাকে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, সংবাদ কর্মীদের নানা প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রিক কনটেন্ট তৈরি করার মানসিক গড়ে তুলতে হবে অর্থাৎ যখন আমরা কোন প্রতিবেদন তৈরির পরিকল্পনা করবো তখন আমাদের সবধরনের কনটেন্ট তৈরির কথা ভাবতে হবে—ভিডিও, অডিও, লেখা, ছবি, ডেটা ও ম্যাপ দিয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিজ্যুয়াল ইত্যাদি। আর এই সব কনটেন্ট যেকোনো নিউজের জন্য তৈরি হবে এবং উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অভীষ্ট পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
মুলিন বলেন, ওয়েবসাইট ও মোবাইল প্ল্যাটফর্ম এই দুটো মাধ্যমের যে ফিচার রয়েছে সেখানে সংবাদমাধ্যম সব ধরনের কনটেন্ট প্রচারের জন্য নিজেদের তৈরি করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর সবার আগে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি হবে যা কি না উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মে প্রচার হবে।
সাংবাদিকতায় পরিবর্তনের এই ঢেউ পশ্চিমা বিশ্ব ছাপিয়ে আমাদের দেশেও এর ছোঁয়া লেগেছে। কয়েক বছরে বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম সনাতনী সাংবাদিকতার পাশাপাশি মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। লোকবল নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরিতে অনেক বৈচিত্র্য এনেছে।
ব্রেকিং নিউজ, ছবি, ভিডিও, অডিও, টকশো, বিনোদন ভিত্তিক অনুষ্ঠানসহ নানা কনটেন্টের বিচরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সাংবাদিকদের এখন দায়িত্ব-কর্তব্য ছাপা কাগজ, রেডিও কিংবা টেলিভিশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একাধারে তাদেরকে ছবি, অডিও-ভিডিও’র সমন্বয়ে ওয়েবসাইটের জন্য মাল্টিমিডিয়া গল্প তৈরির কাজ নিউজরুমের দৈনিক কর্মতালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা দিনে দিনে আরও বেশি মাল্টিমিডিয়া নির্ভর হয়ে উঠেছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক কিংবা অনলাইন নিউজ মিডিয়াসহ প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যম অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ওয়েব ভিডিওর প্রতি বেশি জোর দিচ্ছে।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য আলাদা ডিজিটাল স্টোরি প্রচার করছে যা টেলিভিশনের স্ক্রিনে দর্শকরা দেখতে পান না। আর এই কাজের জন্য ভিডিও বিভাগে আলাদা লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো।
মূলত পাঠক-দর্শককে টানতে প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানাবিধ ফিচার ব্যবহার করা শুরু করেছে। দেশের এখন প্রায় সবকটি প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা তাদের মাল্টিমিডিয়া বিভাগ চালু করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন সাংবাদিক নিয়োগের বেলায় এখন মাল্টিটাস্কার অর্থাৎ যিনি একাই ঘটনাস্থলে গিয়ে সংবাদ তৈরির যাবতীয় কাজের পাশাপাশি মোবাইল ফোন দিয়েই তা লিখতে পারবেন এবং চট-জলদি মোবাইলে ছবি-ভিডিও ধারণ, লাইভ স্ট্রিমিং করা, সম্পাদনা শেষে তা বার্তা কক্ষে দ্রুত পাঠাতে পারবেন এমন লোকবলই চাইছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
পাঁচ বছরে বাংলাদেশি গণমাধ্যম বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমগুলো অনেক বেশি মাল্টিমিডিয়া নির্ভর সংবাদ প্রচারে বেশি তৎপর হতে দেখা গেছে। মূলত পাঠক-দর্শককে টানতে প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানাবিধ ফিচার ব্যবহার করা শুরু করেছে। দেশের এখন প্রায় সবকটি প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা তাদের মাল্টিমিডিয়া বিভাগ চালু করেছে। লোকবল নিয়োগসহ এই খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করছে।
মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে মূলধারার গণমাধ্যমের সমসাময়িক ক্রিয়া-কৌশল পর্যালোচনা করে আমরা পরিশেষে বলতে পারি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পাঠক-দর্শকদের সাথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখার কাজে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পাঠক-দর্শক কী চাইছে সেই চাহিদার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
তাছাড়া টিভিতে দেখা কোনো প্রতিবেদন নিশ্চয়ই আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবার দেখতে চাইবেন না। এই বিকল্প মাধ্যমে পাঠক-দর্শক যে চাহিদা নিয়ে আসে সেখানে হয়তো তারা অপেক্ষা করেন এমন কিছু দেখার বা জানার যা তারা আগে কখনো মূলধারার গণমাধ্যম দেখেনি।
আধুনিক গণমাধ্যমের মিডিয়া ম্যানেজাররা চাইবেন যেন তাদের প্রতিবেদকরা মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ, সংবাদ প্রচার ও পাঠক-দর্শকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন।
গণমাধ্যমকে খবর প্রচারে ‘সবার আগে ডিজিটাল’ এই কৌশল নিয়ে আগাতে হবে। মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ, প্রচার ও পাঠক-দর্শকের মধ্যে যোগাযোগ রাখা যেতে পারে তার জন্য প্রতিটি গণমাধ্যমের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা চাই।
আধুনিক সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে মোবাইল প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবদান অস্বীকারের কোনো সুযোগ আমাদের নেই। দুটি বিষয়ই বলা যায় রাতারাতি সাংবাদিকদের দায়িত্ব-কর্তব্য পাল্টে দিয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম কর্মী এবং সাংবাদিকতা পড়ানো হয় এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বদলে যাওয়া সাংবাদিকতার সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে।
আধুনিক সাংবাদিকতায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইল প্রযুক্তির গুরুত্ব গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের কাছে পৌঁছে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও গণমাধ্যমকে তাই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
ড. জামিল খান ।। সহযোগী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
[email protected]
Leave a Reply