কালোবাজারি বন্ধ করতে এবার ট্রেনের আগাম টিকিটের শতভাগ বিক্রি করা হয় অনলাইনে। ফলে আগাম টিকিট কাটার সেই চিরচেনা ভিড় ছিল না কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
পাশাপাশি টিকিট ছাড়া কাউকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় অনেকটা সুশৃঙ্খলভাবেই চলছিল এবারের রেলের ঈদযাত্রা। তবে চতুর্থ দিন রাতে এসে ভেঙে পড়ে সেই শৃঙ্খলা।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সারাদিন যাত্রীর চাপ তেমন একটা ছিল না কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। তিন ধাপে টিকিট পরীক্ষার পর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়ায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই ট্রেনে চড়তে পারছিলেন যাত্রীরা।
তবে বিপত্তি শুরু হয় সন্ধ্যার পর। হঠাৎ যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে স্টেশন।
মূলত শুক্রবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন কল-কারখানার। তাই বৃহস্পতিবার অফিস বা কাজ শেষে বাড়ির পথ ধরতে শুরু করেন শ্রমজীবীরা। আবার এদের বেশিরভাগেরই টিকিট না থাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় স্টেশনে।
এদিন সন্ধ্যায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ইফতারের পর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে যাত্রীর সংখ্যা, যাদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী। এই শ্রমজীবীদের প্রায় কেউই অনলাইনে আগাম টিকিট কাটেননি। ফলে তারা ট্রেন ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান। তবে কাউন্টার থেকে আসন সংখ্যার মাত্র ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়ায় বেশিরভাগ যাত্রীই কোনো টিকিট পাননি। ফলে টিকেট ছাড়া অনেকটা জোর করেই স্টেশনে প্রবেশ করেন তারা। টিকিট পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মী ও টিকিট পরীক্ষকরা চেষ্টা করেও সেই ভিড় সামাল দিতে পারেননি।
এদিকে টিকেট ছাড়া যাত্রী প্রবেশ করায় সন্ধ্যার পর ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনের ভেতর পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ছাদেও বাড়ি ফিরতে দেখা যায় হাজারো যাত্রীকে। প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও ছাদে ওঠা যাত্রীদের নামাতে পারেননি। ফলে সন্ধ্যার পর প্রায় প্রতিটি ট্রেনই ছাদে হাজারো যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনের দরজায়ও ঝুলতে দেখা যায় বহু যাত্রীকে।
অন্যদিকে যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণহীন চাপের কারণে সন্ধ্যার পর বেশির ভাগ ট্রেনই বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
রাত ৮টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় ট্রেনটি। পাশাপাশি যাত্রীতে ভরে যায় পুরো ছাদ। এরপর আনসার ও রেলওয়ে পুলিশ লাঠিপেটাসহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও মাত্র কয়েকজনকেই ছাদ থেকে নামাতে পারে। ট্রেনটি ৮টার সময় প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাদ থেকে যাত্রী নামানোর চেষ্টার কারণে প্রায় ৫০ মিনিট দেরি হয়।
রাত সাড়ে ৮টায় ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসে পঞ্চগড়গামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। সেটিতেও একই অবস্থা দেখা যায়। ছাদ ও ভেতরে ঠাসা যাত্রী নিয়ে ১৫ মিনিট দেরিতে রাত ৯টায় ছেড়ে যায় ট্রেনটি। লালমনি এক্সপ্রেসও ঠিক একইভাবে রাত ৯টা ৪৫ এর পরিবর্তে ১০টা ৩৭ মিনিটে প্ল্যাটফর্ম ছাড়ে। এই ট্রেনেও ভেতরে ও ছাদে অনেক যাত্রী ছিল।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে না পারার কথা স্বীকার করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, গার্মেন্টসগুলো একদিনে ছুটি দেওয়ায় কয়েক হাজার যাত্রী স্টেশনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আমরা চেষ্টা করেও সেই চাপ সামাল দিতে পারিনি। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে আমাদের অনেকে আহতও হয়েছেন।
Leave a Reply