ঢাকা শহরকে বাইপাস করে গাড়ি চলাচল করা এবং শহরের যানজট কমানোর লক্ষ্যে নির্মিত হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ঢাকার দ্বিতীয় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের ১২ নভেম্বর। বছর ঘুরে এটির নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কথা রয়েছে। তবে বৃহৎ এ প্রকল্প শেষ করতে বহু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকার বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশ খানিকটা দৃশ্যমান হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছে বেশ কয়েকটি পিয়ার। কয়েকটি পিয়ারের ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর পর্যন্ত রাস্তার পাশেও দাঁড়িয়েছে কিছু পিয়ার। সবমিলিয়ে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি শতাংশের হিসাবে পিছিয়ে থাকলেও বলা যায় প্রকল্পটি ‘মাথা তুলে’ দাঁড়াচ্ছে।
এ মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এক হাজার ২৬১টি পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৯৫টি পাইল ক্যাপ ও বিমের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া, ৪৮টি পিয়ার কলামের কাজও শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার পরিষেবা লাইন এখনো সরানো হয়নি। ফলে সেখানে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাছ থেকে এখনো কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বুঝে পায়নি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এসব কারণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে কাজ।
এই প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক গু ফেং জানান, এখানে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার বেশিরভাগ জায়গায় রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। এগুলো বারবার অপসারণ করার কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। বিদ্যুৎ সুবিধা বন্ধ করে তো আর কাজ করা যাবে না। এজন্য কাজ করতে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের একটা নিজস্ব ধর্ম আছে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচলের জন্য এটিকে সোজা রাখতে হয়। যে পথের ওপর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হবে, সেটি অনেক আঁকাবাঁকা। মাটির নিচের পরিষেবা লাইনগুলোও অপসরণ করা হয়নি। আর প্রকল্পের জমি বুঝে পাওয়াটাও আরেক ঝামেলা। তারপরও কাজ চলছে। সড়কের যানচলাচল ঠিক রাখতে যেসব জায়গায় বাইপাস রোড করা প্রয়োজন সেগুলোও করছি।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে তৈরি করবে আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগের সুযোগ। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-তেঁতুলিয়া ও ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করবে এই প্রকল্প। উড়াল সড়কটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে প্রতিটি যানবাহনকে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, নানা অসুবিধায় নির্মাণ কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রকল্প কাজের অগ্রগতি সাড়ে ৯ শতাংশ। গত এক বছরে যেসব বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে, আশা করছি এ বছর সেসব বাধা আর আসবে না। আমরা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ২৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে চাই। পরিষেবা লাইন স্থানান্তর, স্থাপনা অপসারণ ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সমস্যাগুলো দূর হয়ে গেলে নির্মাণকাজে আরও গতি আসবে। আশা করি পুরো কাজটা আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারব।
ঢাকার দ্বিতীয় (ঢাকা-আশুলিয়া) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে প্রকল্পটি। এটি শেষ করার কথা রয়েছে ২০২৬ সালের জুনে। গত বছর ১২ নভেম্বর এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত যাবে, তখন এটি ট্রান্সফরমেশন অবকাঠামো হিসেবে কাজ করবে। তখন ঢাকার মধ্যে প্রবেশ না করে ভারী যানবাহনগুলো ২৪ ঘণ্টাই ঢাকা ক্রস করতে পারবে।
তিনি বলেন, যখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহনগুলো ঢাকাকে ভার্টিকালি বাইপাস করবে, তখন নিচের রাস্তাগুলো অনেকটা চাপমুক্ত হবে। ফলে গণপরিবহনের জন্য প্রসারিত এবং যানজটমুক্ত একটি সড়ক আমরা পাব। তবে এটার জন্য আমাদের ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
Leave a Reply