আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। টানা সাত বছর পর হবে এ সম্মেলন। গত ১০ আগষ্ট যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সাক্ষরিত চিঠিতে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য রাজশাহী মহানগর যুবলীগের নেতৃবৃন্দদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। দিনক্ষণ ঠিক থাকলে ২ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবার রাজশাহীর মহানগরের সাংগঠনিক ৩৭টি ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা এবার ভরসার জায়গা চান।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারীতে মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেয় হাইকমান্ড। এই তিনদিনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন মহানগর যুবলীগ নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন। তবে দুই মেয়াদে টানা ২০ বছর দায়িত্বে থাকা সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু যুবলীগের গঠনতন্ত্র মেনে এবার জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি।
সভাপতি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, আমিনুর রহমান খান রুবেল, যুবলীগ নেতা মাহমুদ হাসান খান চৌধুরী ইতু, আশরাফুল আলম, মুখলেছুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট কাওসার রহমান নাইজার, ইউসুফ আলী ও রবিউল ইসলাম রুবেল।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন মহানগর যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুর রহমান রয়েল, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, মনিরুজ্জামান খান মনির, মাজেদুল আলম শিবলী, রেজাউর রহমান রাজীব, রমজান আলী জনি, জয়নাল আবেদীন, পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, আরকান বাপ্পি, শাহাদাত হোসেন সুজন শেখ, মোরসালিন হক রাবু, আশিকুর রহমান অদ্বিত, মামুনুর রশিদ মাহবুব, প্রভাত রয় মনা, প্রণব সরকার ও জাহিদ হাসান।
এবার মহানগর যুবলীগের সভাপতি হিসাবে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়া ১০ জনের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন তিনজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জনের মধ্যেও আলোচনায় রয়েছেন তিনজন। সভাপতি পদে আছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও রাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন।
একই সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন মহানগর যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন।
এবার মহানগর যুবলীগে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে তরুণরা জায়গা পাবে এমনটাই প্রত্যাশা তৃণমূলের। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে যার তৎপরতা বেশি তাদেরকেই দেয়া হবে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটি। তৃণমূল নেতৃকর্মীদের মতামতে নির্বাচিত হবে সভাপতি ও সম্পাদক।
তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী চাচ্ছেন ভোটের মাধ্যমে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করা হোক। কিন্তু মহানগর যুবলীগের ৩৭ টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সবটিতে কমিটি নেই। যে কারণে ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করার বিষয়টি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রয়েছেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন, তারা যেটা ভাল মনে করবেন সেটা হবে। অনেকেই বলছেন, শেষ পর্যন্ত সমঝোতার মাধ্যমেও কমিটি গঠন হতে পারে।
এদিকে সভাপতি পদের প্রার্থীদের মধ্যে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুজ্জামান শফিক ও রাসিকেব ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিনকে নিয়ে সোরগোল বেশি শোনা যাচ্ছে।
তবে তৃণমূলের ভাবনায় প্রথম সারিতে রয়েছেন রনি। এবার ত্রি-বাষিক সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি হিসাবে রনিকে দেখতে চান তৃণমূল। সভাপতি হিসাবে রনির বিকল্প কাওকে দেখছে না তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। কারণ তিনি সব সময় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছেন।
দ্বিতীয় সারিতে রয়েছেন আব্দুল মোমিন ও তৃতীয় সারিতে রয়েছেন সবেক ছাত্রনেতা শফিক। যদিও আব্দুল মোমিনকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে। কারণ বর্তমান তিনি রাসিকের কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। সেই জায়গা থেকে প্রথমত রনি ও দ্বিতীয়ত শফিকের পাল্লাই এখন পর্যন্ত ভারি বলে মনে করছেন তৃণমূল।
এবার সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জনের মধ্যে তিনটি নাম আসছে সামনে। এরা হলেন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল আকতার নাহান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদেও সোরগোল বেশি শোনা যাচ্ছে দুজনকে নিয়ে। মুকুল শেখ ও নাহান এই দুইজনের একজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে। এই দুজন প্রায় সমান সমান অবস্থান করছে এমনটা বলছেন নেতাকর্মীরা। মুকুল শেখও যেমন তৃণমূল নেতাদের কাছে একজন যোগ্য প্রার্থী, ঠিক নাহানও রয়েছেন একই কাতারে।
সভাপতি প্রার্থী তৌরিদ আল মাসুদ রনি বলেন, যুবলীগের ত্রি-বকাষিক সম্মেলন সফল করার জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নগর যুবলীগের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বর্ধিত সভা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর ভরসা রেখে আমি সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী নিয়ে আমি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কেন্দ্র আমাকে যোগ্য মনে করে দায়িত্ব দিলে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো।
সভাপতি প্রার্থী শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। যুবলীগ যেহুত আওয়ামী লীগের প্রাণ শক্তি। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সঠিক ব্যক্তিকেই এই দায়িত্ব দিবে এটা আমার বিশ্বাস।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুকুল শেখ বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে তৃণমূল যুবলীগের সাথে আছি। সুখে দুখে আমি তৃণমূল নেতাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। হাইকমান্ড যদি আমাকে যোগ্য মনে করে সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেয় আমি মহানগর যুবলীগকে চাঙ্গা করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ আকতার নাহান বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি সব সময় তৃণমূল নেতাদের সাথে থেকেছি। সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। সেই জায়গা থেকে হাইকমান্ড যদি আমাকে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পদকের দায়িত্ব দেন আমি নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করবো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা বলেন, ‘যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান। তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতীত রেকর্ডও পর্যালোচনা করেছেন। যারা দলের জন্য নিবেদিত হিসেবে অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন ও আগামীতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবেন সেই নির্বাচিত হবেন’।
এদিকে মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে প্রতিদিন সম্ভাব্য প্রার্থীরা আলোচনা সভা করছেন। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। খোঁজ খবর নিচ্ছেন তৃণমুল নেতাকর্মীদের। সম্মেলনকে ঘিরে মহানগর যুবলীগে অনেকটাই চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ মার্চ মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে দ্বিতীয় মেয়াদে রমজান আলী সভাপতি ও সম্পাদক হন মোশাররফ হোসেন বাচ্চু। এরআগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল সম্মেলনে তারাই সভাপতি সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বলাই যায় টানা প্রায় ২০ বছর পর এবার রাজশাহী মহানগর যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব আসছে।
Leave a Reply